ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোশাক খাত সুবিধা পেলে চামড়া খাত কেন নয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২১
পোশাক খাত সুবিধা পেলে চামড়া খাত কেন নয়

ঢাকা: পোশাক খাত সরকারের কাছ থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা পায়, সম্ভাবনাময় খাত হওয়া সত্বেও চামড়া শিল্প খাত কেন সেই সুবিধা পায় না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ী, গবেষকসহ সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক।

তারা বলেছেন, চামড়া খাত যদি পোশাক খাতের মতো সমান সুবিধা পায়, তাহলে এই খাত থেকে বছরে এক হাজার কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি করা সম্ভব।

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে এখনো কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধানাগার (সিইটিপি) এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু না হওয়ায় কঠোর সমালোচনা করেন বক্তারা।

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), রিসার্চ পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (আরএপিআইডি) এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

পোশাক খাত সরকারের কাছ থেকে সব ধরনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা, রপ্তানিতে নগদ সহায়তা সুবিধা, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে। যেটা অন্য কোনো খাত পায় না।

করোনার বিরূপ প্রভাবে চামড়া খাতের পুনরুজ্জীবন শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রমুখ।

সালমান এফ রহমান বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে, পোশাক খাত বাংলাদেশে একটি সফল খাত। সরকার পোশাক খাতকে যে যে সুবিধা দিয়েছে, একই সুবিধা চামড়া খাতকে দিলে তারাও সফল হবে।

তিনি বলেন, বিষয়টি বোঝার জন্য তো রকেট সায়েন্স লাগে না। এটা কমনসেন্সের বিষয়। আমি বাণিজ্য সচিবকে অনুরোধ করে বলছি, চামড়া খাতকে সমান সুবিধা দেওয়ার জন্য। যেটা এখন পোশাক খাতকে দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাংক বলেছে, সমান সুবিধা পেলে চামড়া খাত থেকে বছরে এক হাজার ডলার পণ্য রপ্তানি হবে। আমি মনে করি পণ্য রপ্তানি এক হাজার ডলারের বেশি হবে।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে সিইটিপি বসানো নিয়ে দুই দশক ধরে কথা শুনে আসছি। এটা নিয়ে কত সেমিনার, কত কথা হয়েছে। অতীতে যেসব ভুল হয়েছে, তা নিয়ে আর কথা না বলি। চামড়া খাত নিয়ে একটা রোডম্যাপ করা জরুরি। একই সঙ্গে সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কেন কাজটি আপনি করতে পারলেন না তার জবাব দিতে হবে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, দেশে চামড়া শিল্পের যথেষ্ট কাঁচামাল থাকলেও এই খাত এখনো বিকশিত হতে পারেনি। সিইটিপি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনো চালু হয়নি। কাঁচামাল থাকলেই হবে না, এর গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে প্রচুর রাসায়নিক ব্যবহার হয়। শ্রমিকের অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে। এসব কাজ করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই চামড়া খাতের রপ্তানি বাড়বে।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, হাজারীবাগে আমাদের রেখে যাওয়া জমি রাজউক ‘রেড জোন’ করে রেখেছে। এটিকে সবুজ জোন করতে দিনের পর দিন বলে আসছি। ১৫ মাস হতে চলল। এখন পর্যন্ত রাজউক হাজারীবাগের জমিকে সবুজ জোন ঘোষণা করেনি। ওই জমিকে সবুজ জোন ঘোষণা করলে সে জমি বিক্রি করে আমরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারতাম। কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তার কারণে চামড়া খাত পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তা পেলে চামড়া খাতের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। পোশাকের সঙ্গে চামড়া খাতের বৈষম্য বিরাজমান থাকায় চামড়া খাত পিছিয়ে পড়ছে।

বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, পোশাক খাতের মতো চামড়া খাতকে সমান সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা দিতে হবে। তাহলে এই খাতে রপ্তানি বাড়বে।

অনুষ্ঠানে মোট তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। অন্য দুটি করেন যথাক্রমে আরএপিআইডির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ও আবু ইউসুফ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২১
এমআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।