কক্সবাজার: সরকারি নিষেধাজ্ঞা এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় আড়াই মাস সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিলো। নিষেধাজ্ঞা এবং বৈরী আবহাওয়া শেষে সাগরে কক্সবাজারের জেলেদের জালে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ ধরা পড়ছে।
ইলিশের পাশাপাশি ধরা পড়ছে রূপচাঁদা, পোয়া, রিটা, থাইল্যা, ছুরি, লইট্যাসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। তবে, ক্রেতারা বলছেন, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে ঠিকই, কিন্তু দাম অনেক বেশি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার ফিশারি ঘাটের মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলে এবং মৎস্য শ্রমিকরা। সমুদ্র থেকে আসা ফিশিং বোট থেকে মাছ টানেলে তুলছেন তারা। আবার কেউ সেই মাছ ভাঁজে ভাঁজে টুকরিতে ভরছেন কেউ তুলছেন গাড়িতে। যেন এক উৎসবের আমেজ। কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন ইলিশের চালান। এফবি আরাবী-১ ট্রলারের জেলে আবুল কালাম জানান, সাগরে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। তাই বেশিরভাগ ট্রলারই সাগর থেকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রচুর মাছ নিয়ে পাড়ে চলে আসে।
এফবি আবদুল মান্নানের (ট্রলার) মাঝি জামাল উদ্দিন জানান, এ বছর ইলিশের আকার বড়। এক থেকে আড়াই কেজি ওজনের ইলিশ ধরা পড়ছে।
পাইকারী ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, এবার ইলিশের সর্বোচ্চ দাম ওঠেছে। বেশিরভাগ ইলিশ ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া, সিলেট, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সাগরে বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ায় অবতরণকেন্দ্রে তা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। যেমন এককেজি ওজনের ইলিশ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা, এককেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া দেড় কেজি থেকে আড়াই কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আবদুল্লাহ আল আজাদ বলেন, সবে মাত্র ট্রলার আসা শুরু হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে আরও বেশি ট্রলার ঢুকলে দাম হয়তো কমে যেতে পারে।
তবে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশের আকার বড় হওয়ায় দামও ভালো থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির তথ্য মতে, জেলার কুতুবদিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফের উপকূলে প্রায় সাত হাজার ছোট-বড় মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় লক্ষাধিক মাঝি-মাল্লা রয়েছেন। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকেন।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আরও ১২দিন বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে যেতে পারেননি জেলেরা। আড়াই মাস পর সাগরে গিয়ে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আশানুরূপ ধরা পড়ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা ট্রলার মালিক ও জেলেদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এহ্সানুল হক বলেন, এ কেন্দ্রে পাইকারী হারে একশটি করে ইলিশ বিক্রি হয়। গত শনিবার (১৪ আগস্ট) একশ ইলিশের দাম সর্বোচ্চ এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা ওঠেছিল।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, গত বছর ইলিশ আহরণ হয়েছিল ১৫ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন। এ বছর জেলায় ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। আমরা আশা করছি, এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মাছ ও ইলিশের প্রজনন বাড়াতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত (৬৫ দিন) মাছ ধরা ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এছাড়া ২০১১ সাল থেকে অক্টোবর মাসেও সাগরে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে হয় জেলেদের। মাছ ধরা বন্ধ থাকার কারণে ইলিশ বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২১
এসবি/এএটি