ঢাকা: ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তায় পিংক টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে সাইকেল চালিয়ে খাবার নিয়ে ছুটছেন তিনি। এদিকে অর্ডারের কিছু সময় পরেই খাবার হাতে পেয়ে গ্রাহক তো খুশি।
সময় সুযোগ বুঝে এজন্য প্রায় সব গ্রাহকই খাবার হাতে পেয়ে আলাপও সেরে নেন তার সঙ্গে। আত্মবিশ্বাসের গল্প শোনেন, নির্ভার থাকার গল্প শোনেন। অনেকেই বাহবা দেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেন।
কাকে নিয়ে এমন সগতোক্তি করেন অনলাইনে খাবার অর্ডার করা বিভিন্ন বয়সী মানুষেরা? কেনইবা এ বিস্ময়! হাসতে হাসতে নিজের এ গল্পই শোনালেন ফারিয়া তাবাসসুম।
ফারিয়ার আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার শুরু এ বছরের এপ্রিল মাসে। খাবার ও গ্রোসারি ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম ফুডপ্যান্ডায় যোগ দেন রাইডার হিসেবে। শুরু হয় নিজেকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার গল্প।
বিবিএ পরীক্ষার পর এ বছরের শুরুতে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। লক্ষ্য এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। নরসিংদী শহরে বেড়ে ওঠা ফারিয়া তখনও ভাবেননি যে ঢাকায় এসে নিজেই নিজের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে পারবেন। শিক্ষক মায়ের কাছে শেখা আত্মনির্ভর হওয়ার শিক্ষা হাতে-কলমে কাজে লাগাতে পারবেন।
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রবল ইচ্ছা থেকে তিনি পার্ট টাইম কাজ খোঁজা শুরু করেন। কাজ পেয়েও যান। কিন্তু বিপত্তি বাধে তারপর। ঠিক পার্ট টাইম কাজ বলতে যা বোঝায় কাজগুলো আসলে তেমন ছিল না। ফলে চাকরি আর নিত্যদিনের ব্যস্ততা শেষে ঢাকায় আসার মূল লক্ষ্য থেকেই তিনি বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছিলেন।
এরপর একদিন এক নারী রাইডারকে দেখে তার ইচ্ছা তৈরি হয়। খোঁজ নিতে শুরু করেন কীভাবে যুক্ত হওয়া যায় রাইডার হিসেবে। আলাপ হয় এক রাইডার বন্ধুর সঙ্গে। ফুডপ্যান্ডায় রাইডার হিসেবে সাইন-আপ করে কাজ শুরু করেন ফারিয়া।
নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে ব্যবসা প্রশাসনে পড়াশোনা করা ফারিয়ার ভাষায়, অন্য যে সব চাকরি করেছি সেখানে পার্ট টাইম চাকরি বলতে যা বোঝায় আসলে তেমন ছিল না। ঘুরে-ফিরে আট থেকে নয় ঘণ্টা ডিউটি। কিন্তু এখানে আমি পেয়েছি স্বাধীনতা। আমি আমার ইচ্ছা অনুযায়ী শিফটে কাজ করতে পারছি। ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকায় কাজটি উপভোগ করতে পারছি।
ঢাকা শহরে পড়াশোনাসহ এখন নিজের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে পারেন ফারিয়া।
তিনি জানালেন, দিনে ছয় ঘণ্টা কাজ করলে তার প্রয়োজনীয় অর্থ তিনি আয় করতে পারেন। পাশাপাশি স্বাচ্ছন্দ্যে দিনের কাজ সেরে পড়ার টেবিলে বসতে পারছেন।
রাইডার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে শুধুমাত্র নারী হওয়ার জন্য কখনো কখনো কটু কথাও তাকে শুনতে হয়েছে। তবে সে সব কথাকে তিনি পাত্তা দিতেন না। বরং কটু কথাই যেন তাকে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগাতো।
নিজেকে ফারিয়ার খুব বেশি নির্ভার লাগে যখন তিনি ভাবেন তিনিও তার বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারেন। শুধু ছেলেরাই পারে এমন ধারণা ভাঙতে তিনিও যে একজন অগ্রপথিক এটা ভাবতেই অন্যরকম এক তৃপ্তি পান।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২১
জেডএ