রাঙামাটি: প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের সমাহার খ্যাত পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে কাজু বাদাম চাষের বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে কৃষকদের মাঝে কাজু বাদামের চারা বিতরণ এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।
এ অঞ্চলের মাটি যেকোনো ফসল চাষের উপযোগী হওয়ায় কাজু বাদামকে নতুন অর্থকরী ফসল হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। কারণ দেশে এবং দেশের বাইরে কাজু বাদামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রপ্তানি খরচ কমাতে এবং কৃষকদের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে এমন উদ্যোগ সরকারের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতে জেলার কিছু দুর্গম এলাকায় বিছিন্নভাবে কাজু বাদামের চাষ হলেও জুম চাষে তা চাপা পড়েছে। তবে রাঙামাটির ইতিহাসে এক ব্যক্তি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে কাজু বাদামের ব্যবসা করে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। স্থাপন করেছেন নিজস্ব কারখানা। তার এমন পরিশ্রমে ভাগ্য দেবীও প্রসন্ন হয়েছে তার ওপর। তাই সফলতা তার কাছে ধরা দিয়েছে। সফল উদ্যোক্তার নাম সাব্বির আহম্মেদ। বয়স পয়ছট্টি ছুঁই ছুঁই। কারখানার নাম রেখেছেন ‘ফেরদৌস সেন্টার’।
উদ্যোক্তা সাব্বির আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমি রাজধানী ঢাকায় ফলমূলের ব্যবসা করতাম। সেখানে দেখলাম কাজু বাদামের ব্যবসা বেশ ভালো, লাভও অনেক। তাই মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে ফলমূলের ব্যবসা গুঁটিয়ে নিজ জেলায় চলে আসলাম। কারণ আমাদের এলাকার দুর্গম পাহাড়গুলোতে কাজু বাদামের চাষ করতো পাহাড়িরা। তাদের কাছ থেকে বাদাম কিনে প্রথমে নিজের বাড়িতে ছোট পরিসরে বাদামের প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেটজাত পরিশেষে বাজারজাত করতে শুরু করলাম ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায়। এরপর ব্যবসার পরিধি বাড়িয়ে নিজ বাড়িতে বাণিজ্যিক কারখানা স্থাপন করেছি।
উদ্যোক্তা সাব্বির আরও বলেন, প্রথমে সনাতন পদ্ধতিতে কারখানার কার্যক্রম শুরু করলেও পরে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেশিন ক্রয় করি। এজন্য ত্রিশ লাখ টাকার বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়েছে আমার। মেশিনগুলো চালানোর কারিগরসহ কারখানায় পঁয়তাল্লিশজন শ্রমিক কাজ করছেন। বেশিরভাগ নারী শ্রমিক। প্রতিমাসে দুই লাখ টাকার কাছাকাছি আয় হয় তার।
উদ্যোক্তা সাব্বির আহম্মেদ জানান, বেশিরভাগ কাজু বাদাম তিনি সংগ্রহ করেন বান্দরবান থেকে। এছাড়া রাঙামাটির দুর্গম বরকল উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী হরিণা এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা এলাকা থেকেও স্বল্পসংখ্যক কাজু বাদাম সংগ্রহ করেন। রাঙামাটিতে তার কারখানার পর বর্তমানে আরেকটি কাজু বাদামের কারখানা স্থাপিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভারত এবং ভিয়েতনামে বাদামে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। কেমিক্যাল ব্যবহারের মূল কারণ বাদামের মেয়াদকাল বাড়ানো। কিন্তু তিনি কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করেন না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে প্যাকেটজাত করেন। ফলে এখানকার বাদাম খেতে বেশি সুস্বাদু।
সাব্বির আহম্মেদ বলেন, নতুন এই অর্থনৈতিক খাতটির উন্নয়নে সরকারি প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং রাঙামাটি জেলা পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কারখানার হ্যান্ডকাটার মেশিনের শ্রমিক হযরত আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমি ভারতের তামিলনাড়ুতে কাজু বাদাম ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। এখানে যোগ দিয়েছি বেশিদিন হয়নি। কাজটি করতে ভালো লাগে।
কারখানার নারী শ্রমিক হাসিনা বেগম, মনোয়ারা বেগম এবং আঞ্জুমান পাপড়ি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কাজু বাদাম কাটার কাজ করি। এক কেজি বাদাম কাটলে চল্লিশ টাকা পাই। দিনে কয়েক কেজি কাটতে পারি। ঘরের অভাব মেটাতে পারছি এটাই শান্তি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, অনেক আগে থেকে বান্দরবান জেলায় কাজু বাদাম চাষ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। আমরাও পিছিয়ে থাকতে চাই না। সরকারি উদ্যোগটি সফল করতে পারলে এখানকার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব দূর হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২১
আরএ