ঢাকা: দ্রুত বর্ধনশীল মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ যাত্রা শুরু করেছে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ। মাত্র আড়াই বছরে কোম্পানিটির দখলে রয়েছে বাজারের ৩০ শতাংশের বেশি।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম: এমএফএস হিসেবে নগদের অবস্থান কি এই মুহূর্তে
তানভীর এ মিশুক: ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরুর আগে একটি কোম্পানির দখলে ছিল বাজারের ৯৮ শতাংশ। নগদ বাজারে আসে বিভিন্ন উদ্ভাবনী সেবা নিয়ে। সঙ্গে ক্যাশ আউট চার্জ কমিয়ে অনেক সাশ্রয়ী করা হয়। তখন গ্রাহকরা নগদ’র দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে বাজারের নগদের অবস্থান শক্তিশালী হয়। আমাদের অবস্থান ভালো। তারপরও আমরা এটা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। সামনের দিনে কীভাবে আরো ভালো কিছু করা যায়, সেটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম: নগদের গ্রাহকের সংখ্যা এত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে কিভাবে
তানভীর এ মিশুক: নগদ’র যাত্রার পর ডাক বিভাগকে তার শেয়ারের অংশ থেকে রেভিনিউ শেয়ার করেছে। মূলত আমরা মুনাফা করার জন্য আসিনি। আমরা এসেছি মানুষের জীবন পরিবর্তন করার জন্য। এ জন্যই এত উদ্ভাবন আমরা এনেছি। ইতোমধ্যে ফলাফলও আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। ৫ কোটি মানুষ কখনো চিন্তাও করেনি তারা ডিজিটালি লেনদেন করবে। আমরা মানুষকে ঘরে বসে নিজে নিজে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। এতে সহজেই সবাই নগদকে বেছে নিয়েছেন। ফলে গত দুই বছরে নগদের গ্রাহক সংখ্যার এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম: নগদ প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে কী ধরনের সেবা দিচ্ছে
তানভীর এ মিশুক: মানুষের জীবনে কিন্তু পরিবর্তন করতে পেরেছি। এখন কোনো উপকারভোগীর কাছে ভাতার টাকা না পৌঁছালে সেটা সরকারের কাছে ফেরত চলে আসছে। নগদ এবং অন্য এমএফএস মিলে এটা করে দেখানো গেছে যে, যেটা বিতরণ করা সম্ভব না সেটা সরকারের কাছে ফেরত পাঠানো সম্ভব। আগে মানুষের ভাতার টাকার অপব্যবহার হতো। আমরা আসলেই মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছি। এটা সম্ভব হয়েছে নগদের প্রযুক্তির কারণে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম: নগদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি
তানভীর এ মিশুক: আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, যারা এখনো আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে তাদেরকে সেবার আওতায় নিয়ে আসা। অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছি। ব্যাংক এবং এমএফএস যেটা কাভার করছে তার তিনগুণ মাইক্রো এসএমই খাত। এই মার্কেটটা আমরা এখনো ফোকাস করছিনা। সাধারণ ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। এজেন্ট ব্যাংকিং আছে, পিএসও আছে। এর বাইরে আরও একটা বিশেষ ক্যাটাগরিতে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থনীতিতে নিয়ে আসব, ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট একটা প্রভাব পড়বে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম: জনসেবায় নগদ কি কি কাজ করছে
তানভীর এ মিশুক: মাইক্রো এসএমই খাতকে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে নিয়ে আসার জন্য ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হয়, তাতে তারা মুনাফা করতে পারে না। এ কারণে বিশ্বব্যাপী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ফরমাল ইকোনোমির আওতায় আনতে কাজ করতে চায় না। এটা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানিগুলোর দ্বারা সম্ভব। এর জন্য যে প্রযুক্তি দরকার, সেটা নগদের আছে। নগদ এটা আরও উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। আমরা আশা করছি নিয়ন্ত্রক সংস্থা চলতি বছরের মধ্যে অনুমোদন দিলে এ বছরই আমরা সার্ভিসটা চালু করতে পারব।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম: মানুষ কেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে
তানভীর এ মিশুক: আমাদের দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে ক্যাশে লেনদেনে করতো। কারণ তাদের পক্ষে ব্যাংকে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ১০ পাতার একটি আবেদন ফরম পূরণ করা সম্ভব না। একই সমস্যায় আমি নিজেও পড়েছি। আমরা গ্রামের সাধারণ মানুষকে অ্যাকাউন্ট খোলার সেই ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়েছি। স্মার্ট ফোনে নগদ অ্যাপ ডাউনলোড করে এবং বাটন ফোনে *১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছি ডিজিটাল কেওয়াইসির মাধ্যমে। দ্রুতগতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। গবেষণায় উঠে এসেছে এখনো বাংলাদেশের ইনফরমাল ইকোনোমি হচ্ছে ৫২ শতাংশ। এই টাকা মানুষ বালিশের নিচে রাখতো। আমরা সেই অর্থ মোবাইল লেনদেন চ্যানেলে আনার কাজটা করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
কেএআর