ঢাকা: ব্যাংকের মাধ্যমে বিমাপণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফলে সারাদেশে ব্যাংকের শাখা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষও বিমাপণ্য কিনে নিজেদের আর্থিকভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
এ জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে বিমাপণ্য বিক্রির একটি বিকল্প বিক্রয় কৌশল প্রণয়নের নির্দেশিকা তৈরি করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
নতুন বিমাপণ্য চালু হলে ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো আরও বেশি গ্রাহক পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার ফলে বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের রাজস্ব আয় বাড়বে।
ব্যাংকের মাধ্যমে বিক্রি করা বিমাপণ্য জনপ্রিয়তা পাওয়ায় এটিকে বলা হয় ‘ব্যাংক ইন্সুরেন্স’, যা ১৯৭০ এর দশকে ফ্রান্সে চালু হয়েছিল।
‘ব্যাংক ইন্সুরেন্স’ মূলত ব্যাংকার এবং গ্রাহকদের সর্ম্পকের ভিত্তিতে ব্যাংকাররা গ্রাহকদের এই বিমা নেওয়ার প্রস্তাব দেবেন।
এ লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) গুরুত্বপূর্ণ সব অংশীজনদের নিয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক করে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মো. সলিম উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ছাড়াও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং বেসরকারি ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন ব্যাংকার বাংলানিউজকে বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুটি নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জমা দিতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখন নির্দেশিকা প্রস্তুত করছি এবং আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জমা দিতে পারবো।
তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর এই বিমা চালু করার ক্ষেত্রে আইনগতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না।
ওই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ধারার ৭ (অধ্যায় ২) মোতাবেক সরকারের কাছ থেকে প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পরে ব্যাংকের জন্য ব্যাংক ইন্সুরেন্সের প্রবিধান প্রণয়ন ও প্রচলন করার ক্ষমতা দেওয়া হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে দেশটির সরকার ১৯৪৯ সালের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যাক্টের ৬ ধারার ক্ষমতা বলে ২০০০ সালের ৩ আগস্ট এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক ইন্সুরেন্স প্রবর্তনের ফলে বিমার বিপ্লব ঘটবে, যা অন্যান্য আর্থিক পণ্যের ঝুঁকির কভারেজের দিকে নিয়ে যাবে। এজন্য ব্যাংকগুলোর কোনো মূলধন বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ড. ইসমাইল নতুন ব্যাংকে ইন্সুরেন্স সর্ম্পকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
উপস্থাপনায় ব্যাংক ইন্সুরেন্সের সম্ভাবনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ ধরনের ব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব অর্থনীতিতেই রয়েছে, যা রাজস্বের জন্য ঝুঁকি-ভিত্তিক মূলধনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করবে। বিমায় বহুমুখীকরণের মাধ্যমে আয়ের একটি অতিরিক্ত এবং আরও স্থিতিশীল প্রবাহ সুরক্ষিত করবে এবং আয়ের প্রধান উত্স হিসেবে সুদের ব্যবধানের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করবে।
ব্যাংক এবং বিমাখাতের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে পারে ব্যাংক ইন্সুরেন্স। এছাড়াও, বর্ধিত বিমা কভারেজ জনসংখ্যার আর্থিক বিচক্ষণতাকে যুক্ত করবে এবং দুর্যোগের সময় আর্থিক সহায়তা দেবে। সারাদেশে ব্যাংকগুলোর শাখা নেটওয়ার্ক দেশের অনেক বেশি মানুষের কাছে ব্যাংক ইন্সুরেন্সের সুবিধা পেতে সহায়তা করবে।
এর আগে, দেশে কার্যতে ৭৮টি বিমা কোম্পানির মতামত নিয়ে ২০২১ সালের জুনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে (এফআইডি) পাঠিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে একটি কারিগরি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কারিগরি প্রতিবেদনেও আইডিআরএ মতামত দিয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো মতামতে আইডিআরএ বলছে, এ ধরনের বিকল্প চ্যানেলগুলো দেশের বিমা আইন এবং ব্যাংক কোম্পানি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আইডিআরএ মনে করে ব্যাংকইন্সুরেন্স দেশে বিমা গ্রহীতার হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে, যা এখন মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশের কম।
দেশে এখন ৭৮টি লাইফ ও নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম পুনঃবিমা কোম্পানি সুইস রে’র মতে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিমা নিয়েছিল ০ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
এসই/এমজেএফ