ঢাকা: টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের অনিয়ম নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, একেবারে অস্বীকার করতে চাই না যে, অনিয়ম হয়নি। হতে পারে ৫ শতাংশ মানুষ নজর ফাঁকি দিয়ে ঢুকে গেছে কিন্তু আমরা ৯৫ শতাংশ মানুষের কাছে তো পৌঁছে গেলাম।
বুধবার (১৭ আগস্ট) সচিবালয়ে টিসিবির এক কোটি পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এক কোটি পরিবারের মধ্যে ভর্তুকিমূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আড়াই হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেসব দরিদ্র মানুষ থেকে সাড়ে ৮ লাখ বাদ দিয়ে ৩০ লাখ লোক নেওয়া হয়। শহরগুলো থেকে ৭০ লাখ লোক ঠিক করা হয়েছে। রমজান মাসে ঈদকে সামনে রেখে সময় কম থাকায় তখন একটু তাড়াহুড়া ছিল। স্থানীয় কমিটি এ তালিকা করেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় করেনি। কার্ডধারীরা টিসিবির পণ্য বাজার থেকে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কম দামে পেয়েছে।
টিআইবি যে রিপোর্ট করে সেটা প্রথম দিককার রিপোর্ট, মার্চ ও এপ্রিলের দিকে তারা চেক করেছে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, তারা এক কোটি কার্ডধারীর মধ্যে এক হাজার ৪৭ জনকে নিয়েছেন। যেটার পার্সেন্টেজ পয়েন্ট ০০০১৪ শতাংশ। এরমধ্যে বাদ দেওয়া সাড়ে ৮ লাখ মানুষও তো আছে। আমরা অ্যাপ্রিসিয়েট করি, যে কোনো রিপোর্ট যে কোন তদন্ত আমাদের চোখ-কান খুলে দেয়। কিন্তু সেটি যদি যৌক্তিক হয় বা সেটা যথার্থ হয় তাহলে আমাদের পক্ষে কাজ করতে সুবিধা হয়। তা না হলে মানুষের মধ্যে কনফিউশন সৃষ্টি করে। তারপরও আমরা কাউকে আন্ডারমাইন্ড করতে চাই না। আমাদের দায়িত্ব যে, সত্যিটা কী, কী ঘটনা ঘটেছে।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, নাম ঢোকার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি একেবারে অস্বীকার করতে চাই না যে, অনিয়ম হয়নি। কিন্তু বাস্তবতা কী, আমাদের দেশটা কোথায়? পশ্চিমা বিশ্বের মতো না যে, একটা চাপ দিয়ে বিস্তারিত পাওয়া যাবে। আমাদের নির্ভর করতে হয়েছে কমিটির ওপর। হতে পারে ৫ শতাংশ মানুষ নজর ফাঁকি দিয়ে ঢুকে গেছে। কিন্তু আমরা ৯৫ শতাংশ মানুষের কাছে তো পৌঁছে গেলাম। আমরা পর্যায়ক্রমে কিন্তু সেগুলোও দেখছি। আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চাই। এ চলার পথে যদি কোথাও কোথাও কোনো সংশোধন দরকার, কোথাও কোনো অনিয়ম থাকে সেটাও আমরা শনাক্ত করব।
এক কোটি কার্ডের মধ্যে কতগুলো কার্ড বিতরণ করা হয়েছে জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, এক কোটির মধ্যে ঢাকা শহরের বাইরে বাকি নেই, ৯৯ শতাংশ হয়েছে। ঢাকা শহরের জন্য ১৩ লাখ রাখা হয়েছে। দুই সিটির একটাতে ৭, আরেকটাতে ৬ লাখ কার্ড দেওয়া হবে। আমার ধারণা ৮০ শতাংশ কার্ড বিতরণ হয়ে গেছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কিছু পিছিয়ে আছে। দক্ষিণে ৭ লাখের মধ্যে সাড়ে তিন লাখ হয়ে গেছে। এখনও কার্ড দেওয়া সম্পন্ন হয়নি। আশা করি এক মাসের মধ্যে শতভাগ হয়ে যাবে। উত্তর সিটিতে কার্ড দেওয়া শেষ। ৫ শতাংশের মতো বাকি আছে সারা দেশে।
টিআইবি কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রতিবেদন করেছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা আমি জানি না। এ বিষয়ে আমরা কাউকে দায়ী করতে চাই না। সত্য যেটা সেটা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাই। বিবেচনাটা আপনাদের যে, তারা কী করেছে। আমার কথা হলো, অসৎ উদ্দেশ্য বা সৎ উদ্দেশ্য সেটা তার ব্যাপার। আমার কথা হলো, যেটা সঠিক সেটা তুলে ধরতে হবে।
টিআইবি যদি ভুল তথ্য দিয়ে থাকে তাহলে কি তাদের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করতে আসেনি। আমরা সত্যটা তুলে ধরতে এসেছি।
টিআইবি বলছে ৩৯ শতাংশ অনিয়ম হয়েছে, এ ব্যাপারে টিপু মুনশি বলেন, তারা যে ৩৯ শতাংশ বলছে, সেটা কীসের ভিত্তিতে নিয়েছে, কতজনকে নিয়েছে। এই হিসেবটা আমাদের কাছে পরিষ্কার না। কেননা তারা দুটি জায়গায় দেখেছে ৩৮ লাখ ৫০ হাজার কার্ডধারী থেকে ৩০ লাখে গেছে। এরা আগে সবাই ২৫০০ টাকা করে পেয়েছে। আমরা সাড়ে ৮ লাখ বাদ দিয়েছি।
তিনি বলেন, টিআইবি বলেছে, আনসার, দফাদার, গ্রাম পুলিশ কার্ড পেয়েছে। এরা বেতন পায় রোজ ১৫০ টাকা। এ লোকটা তো দরিদ্র। তাদের দেওয়াটা কি অপরাধ। কিন্তু সেটাকেও তারা টার্গেট করেছে।
যারা কার্ড পেয়েছে তাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিল, এ বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে টিপু মুনশি বলেন, এক কোটি মানুষের মধ্যে কি এই ৭৬ শতাংশ? তাহলে আমি প্রশ্নটা করি যে, এক কোটির মধ্যে ৩০ লাখ বাদ যাবে কারণ তারা আগে থেকে পেয়ে আসছে। ৭৬ শতাংশ ধরলে ৩০ লাখও চলে আসে। তাহলে তো হিসাবটা বস্তবসম্মত না। আর আমরা যে নতুন করে ৭০ লাখ লোককে কার্ড দিলাম সেখানে একজনও দরিদ্র নেই। এটা কি সত্য হতে পারে! এটা আপনাদের কাজে প্রশ্ন।
গত ১১ আগস্ট ‘টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি জানিয়েছে, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রমে প্রকৃত উপকারভোগী অনেকে বাদ পড়েছেন। বাদ পড়াদের ৮০ শতাংশই মনে করেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। ফ্যামিলি কার্ড পেতে ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
জিসিজি/এমজেএফ