ঢাকা: দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে বাজারে চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা কমতে পারে বলে মনে করছেন চাল ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, চাল আমদানিতে নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে ডলারের দামও কিছুটা কমেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা এখন চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাবেন। পাশাপাশি সরকার সেপ্টেম্বর মাস থেকে ওএমএস ও খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি চালুর ঘোষণাও দিয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে চালের দাম কমে যাবে।
প্রসঙ্গত, রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, চাল আমদানিতে এখন রেগুলেটরি ডিউটি বা আবগারি শুল্ক ৫ শতাংশ, আগাম আয়কর ৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর ৫ শতাংশসহ মোট ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শুল্ক কর দিতে হবে। আর এই আদেশ আটোমেটেড চাল ছাড়া সব ধরনের চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। একই সঙ্গে আমদানির আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার অনুমোদন নিতে হবে। এর আগে চালে শুল্ক-কর মিলিয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য ছিল। কমিয়ে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হলো। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে, যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী রশিদ রাইস এজেন্সির মালিক মো. আব্দুল রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, আজ সরকার চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে। ডলারের দামও কমছে কিছুটা। ফলে কয়েকদিনের মধ্যে চাল আমদানি বেড়ে যাবে। এতে বাজারেও প্রভাব পড়বে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা কমে যাবে।
বাদামতলি ঘাটের চাল বিক্রেতা ও হাজী রাইস এজেন্সির ম্যানেজার জিয়াউল হক বাংলানিউজকে জানান, শুল্ক কমানোর ঘোষণার ফলে চালের দাম আরো কমে যাবে। আমদানিকৃত চালও বাজারে ঢুকেছে। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে।
বাবুবাজারের জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির মালিক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। যদিও এ দামটা সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়। চাল আমদানি শুল্ক কমানোয় দাম কমে যাবে। তবে একটি শ্রেণি সব সময় আতঙ্ক তৈরি করে চালের বাজার অস্থিতিশীল করে। আর এর দায়ভার সকল ব্যবসায়ীদের ওপর পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এবিষয়ে বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর ঘোষণা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকলের মনে স্বস্তি এসেছে। ব্যবসায়ীরা এখন আমদানি বাড়িয়ে দেবে। বাজারে আমদানিকৃত চাল এলে দাম কমে যাবে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে এর একটা প্রভাব পড়বে বাজারে।
রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা৷ নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারিমানের চাল পাইজাম ও হাস্কি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। আটাশ চাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মোটা চাল স্বর্ণা ৫২ থেকে ৫৫ টাকা।
পাইকারি বাজারে চিকন চাল প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭২ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৮০ টাকা, বাসমতি ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা। মোটা চাল প্রতি কেজি পাইজাম ৫০ থেকে ৫৩ টাকা, স্বর্ণা ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঢাকার বাজারে মোটা চালের কেজি ৪৪ থেকে ৫০ টাকা। আর খুচরা মূল্য ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি।
এদিকে এর আগে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে ওএমএস ও খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলার এবং বিএডিসি ও বিসিআইসি সার ডিলারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। বিরূপ আবহাওয়া হলে আমনের উৎপাদন কম হতে পারে। তাই সতর্কতা হিসেবে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছি। ইতোমধ্যে বেসরকারি চাল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ রেগুলেটরি ট্যাক্স কমিয়েছি। আমাদের খাদ্য মজুতও পর্যাপ্ত। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ওএমএস বিতরণের ঘোষণা দেওয়ার পরই চালের দাম ধীরে থীরে কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
জিসিজি/এসআইএস