ঢাকা: ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যেসব গ্রাহক দিনের পর দিন ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করে নানা ছুতোয় ছল চাতুরি করে সময় ক্ষেপণ করছিলেন, সেসব গ্রাহকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংক থেকে বার বার তাদাগা দেওয়ার পরও কিস্তি না দিয়ে খেলাপিরা এতদিন ধরে নিয়েছিলেন ব্যাংকের টাকা হয়তো আর ফেরত দিতে হবে না।
আদালত ও ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ইউসুফ ট্যানারি জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে ১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ঋণ নেয়। পরবর্তীতে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ২০০৭ সালে ঋণটি খেলাপিতে পরিণত হয়ে যায়। গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ইউসুফ ট্যানারি সুদ মওকুফের আবেদন করলে ২০১৫ সালে মোট ২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করে জনতা ব্যাংক। এ সুযোগ পেয়েও আদায়যোগ্য ১১ কোটি ১৪ লাখ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয় ইউসুফ ট্যানারি। পরে আবার সুদ মওকুফের আবেদন করলে ২০২১ সালে তা মওকুফের সুযোগ দেয় জনতা ব্যাংক। এবারও ঋণটি পরিশোধ না করে সময়ক্ষেপণ করছিল ইউসুফ ট্যানারি। সর্বশেষ সুদ-আসলে এ প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া দাঁড়ায় ৪৭ কোটি ২৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, ব্যাংকের শাখা থেকে ঋণ আদায়ে বার বার যোগাযোগ করেও গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা (নম্বর ৪৩৮/২০২০) দায়ের করে। আদালত মামলার নথি পর্যালোচনা করে ইউসুফ ট্যানারির ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এ প্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গত রোববার (২৮ আগস্ট) অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে প্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগরে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গ্রেফতাররা হলেন— ইউসুফ ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বশির উল্লাহ, পরিচালক মো. অজিউল্লাহ, বন্ধকদাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বশির উল্লাহর ৩ ছেলে মো. ইউসুফ আলী, মো. হারুণ অর রশিদ ও মো. আবু সুফিয়ান।
এর আগে ব্যাংকের ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পরিশোধ না করে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতন এবং পরিচালক টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ারকে ৫ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন অর্থ ঋণ আদালত। পাশাপাশি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (আরএসআরএম) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমানকে ৩১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণখেলাপির দায়ে পাসপোর্ট জব্দসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত। এছাড়া মতিঝিল কর্পোরেট শাখায় গোল্ডেন রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের সাড়ে ছয় কোটি টাকা অনাদায়ে (মামলা নম্বর ১৮০/১৭) খেলাপি গ্রাহক মো. আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্য কর্পোরেট শাখার আব্দুস সামাদ প্যাকেজিংয়ের আড়াই কোটি টাকা অনাদায়ে প্রতিষ্ঠানটির ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। গাজীপুর কর্পোরেট শাখার খেলাপি গ্রাহক মেসার্স হাসান স’ মিলের এক কোটি এক লাখ টাকা অনাদায়ে মিলটির মালিক খন্দকার জাকির হোসেনকে গ্রেফদার করে আদালতে পাঠানো হয়।
যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে আমরা অত্যন্ত আন্তরিক। এজন্য যেসব খেলাপি গ্রাহক দীর্ঘ সময় ধরে ঋণ পরিশোধে সময়ক্ষেপণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু দৃষ্টান্ত সবাই দেখতে পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, দেশে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও বেগবান করতে হলে অধিক সংখ্যক মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা জরুরি। এর ফলে দেশে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকারের এ নীতির সাথে মিল রেখে কাজ করছে জনতা ব্যাংক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২২
এমজেএফ