জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও আনোয়ারা বেগমের মেয়ে সাবিহা খাতুন স্কুলে পড়ার সময় থেকেই স্বপ্ন দেখতেন, গ্রামের মানুষের অবসর সময়টাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর। তাই তো লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে মায়ের কাছে শিক্ষা নেন উল, সামারিয়ান সুতা আর কুশি কাটা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরির কাজ।
সাবিহা শীতের চাদর, ছেলে-মেয়েদের টুপি, বাহারি রঙের পাপস, টেবিল ম্যাট, টিস্যু কাভার, লেডিস ব্যাগ, বাচ্চাদের হরেক রকমের গহনা, শো-পিসসহ অন্তত ৩০ ধরনের পণ্য তৈরি করে জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বসবাসরত শৌখিন গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করছেন। এতে উদ্যোক্তা সাবিহা যেমন লাভবান হচ্ছেন, ঠিক তেমনি তিন গ্রামের শতাধিক নারীও অর্থনৈতিকভাবে হয়েছেন সচ্ছল।
কারণ, সাবিহা তাদের এরই মধ্যে প্রশিক্ষিত করেছেন। এ কাজ করে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সংসার সামলানো গৃহবধূরাও এখন অর্থ রোজগার করছেন।
গোবিন্দপুর গ্রামের অষ্টম শ্রেণি ও কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী তাবাস্সুম ও মোরসালিন বলেন, আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি সাবিহা আপুর এখানে কুশি কাটার কাজ করে মাসে দুই-তিন হাজার টাকা রোজগার করি। যা দিয়ে বই খাতা কিনতে পারি।
ওই গ্রামের গৃহবধু সোনিয়া আক্তার, সুলতানা বেগম ও আফরোজা খাতুন বলেন- সংসার সামলানোর পাশাপাশি অবসর সময়টাকে আমরা কাজে লাগাই। সাবিহার কাছ থেকে আমরা যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছি, তারা এরই মধ্যে কুশি কাটার কাজ বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছি। আমরা পণ্য তৈরি করে সাবিহার কাছে বিক্রি করি। এতে কেউ কেউ দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারে মাসে। যা দিয়ে আমরা আমাদের সংসারে ব্যয় করতে পারি।
লিমা আক্তার (২২) নামে এক গৃহবধূ বলেন, ফুল টুপি, কুশি কাটার ফ্রক, বেনি টুপি ও বেবি নেকসহ অন্তত ৬০-৭০টি পণ্য তৈরি করে মাসে তিন হাজারেরও বেশি টাকা রোজগার করি।
এদিকে উদ্যোক্তা সাবিহা খাতুন অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, গ্রামের মানুষের কাজের বিনিময়ে অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা স্বাবলম্বী করে ছোট বেলার একটা স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় কিছু অর্জন আমার কাছে নেই। কারণ, আমি ছোট বেলা থেকে মনে প্রাণে গ্রামের মানুষদের জন্য কিছু করতে চেয়েছি।
সাবিহা খাতুনের ‘সোহা নারী কল্যাণ সংস্থা’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে তিন গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বয়সী নারী মাসে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করছেন। আর এ সংস্থা থেকে উদ্যোক্তা সাবিহা প্রতি মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন।
সাবিহা জানান, তিনি গ্রামের নারীদের কাছ থেকে পণ্য কিনে বিক্রি করেন। ফ্রকের খুচরা মূল্য (এক থেকে দুই বছরের বাচ্চার) ১৬০০ টাকা, পাইকারি মূল্য ১২০০ টাকা, বেনি টুপির দাম খুচরা ৪৫০-৫০০, পাইকারি ৩০০ টাকা, বেবি নেকের খুচরা মূল্য ১৫০-৩৫০ ও পাইকারি দাম ১২০-২৫০ টাকা। সামারিয়ান সুতায় তৈরি শাল খুচরা ২৭০০ টাকা আর পাইকারি ১৮০০ টাকা।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাবান খাতুন বলেন, উদ্যোমী উদ্যোক্তা সাবিহা খাতুন গোবিন্দপুর গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী আরও দু’টি গ্রামের নারীদের জন্য আশির্বাদ। কারণ তার হাত ধরেই আজ এ তিন গ্রামের নারীরা ঘরে বসেই রোজগার করতে পারছেন।
এদিকে জয়পুরহাটের বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, সাবিহা এবং তার কর্মীদের কাজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। সাবিহা মায়ের কাছ থেকে হাতে কলমে শিক্ষা নিলেও আমাদের বিসিক থেকে তাকে প্রশিক্ষণ ও নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ কাজ করতে গিয়ে তিনি যদি কোনো আর্থিক সহযোগিতা চান, তাহলে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে তাকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২
এসআই