ঢাকা: আসন্ন আমন মৌসুমে ৫ লাখ টন চাল ও ৩ লাখ টন ধান কিনবে সরকার।
প্রতিকেজি চাল ৪২ টাকা ও ধান ২৮ টাকায় কেনা হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধান কমিটির সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী ডা. আবাদুর রাজ্জাক, কৃষিমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর মোট ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিকেজি চাল ৪২ টাকা ও ধান ২৮ টাকায় কেনা হবে। আমন কাটা শুরু হলে কেনা শুরু হবে। আগামী ১০ নভেম্বর থেকে কেনা শুরু হবে।
ধান ও চালের দাম নির্ধারণে কৃষকের স্বার্থ দেখা হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, তিন-চার বছর ধরে মধ্যসত্ত্বভোগীদের মাধ্যমে কোনো ধান কেনা হচ্ছে না। যেমন আমরা কৃষকদের অ্যাপের মাধ্যমে ধান কিনি, আবার কৃষকের তালিকা ধরে লটারির মাধ্যমে সংগ্রহ করি। টাকাও সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে চলে যায়। এখানে মধ্যসত্ত্বভোগীদের কোনো সুযোগ নেই।
বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সবকিছু আমাদের মাথায় আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। আমাদের প্রস্তুতি আছে। বাংলাদেশে খাদ্যসংকট হবে না।
ওএমএসের আটা ৮ টাকা বৃদ্ধি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এমন কোনো প্রস্তাব হয়নি। বৃদ্ধিও করা হয়নি। প্রতিকেজি আটার দাম ১৮ টাকাই আছে। সরকারি আটার দাম না-বাড়ানোর কারণ হলো, অন্তত পক্ষে যারা নিম্নআয়ের লোক, তাদের জন্য এটি সহায়ক হবে।
গত মে মাসে ভারত যখন গম রপ্তানি বন্ধ করলো তখন সরকার বললো যে ভারত থেকে আমরা গম পাবো। কিন্তু ভারত গম দেয়নি। এখন ভারত গম দেবে কিনা আর আমাদের প্রাইভেট সেক্টর কোথাও গম পাচ্ছে না। ফলে দেশে গমের ঘটতি দেখা দেবে সেক্ষেত্রে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। আগে বেসরকারিভাবে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি হতো। এবছর সেখানে ৪৮ লাখ টন গম আমাদনি হয়েছে। ফলে কিছু ঘাটতি আছে। এজন্য আমরা বলেছি, যখন আটার দাম বেশি হয় তখন চালের ওপর প্রভাব বেশি পড়ে। আমরা বেসরকারিভাবে যদি গম আমদানি করতে না পারে। অরেক জায়গায় খোলা আছে যেমন আর্জেন্টিনা, কানাডা খোলা আছে। সেখান থেকে তারা আনতে পারে। দাম হয়তো একটু বেশি পড়বে। এতে করে যদি বেসরকারি খাতে গম না আনে। তাহলে চালের ওপর চাপটা পড়বে।
তিনি বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে আমাদের খাদ্যের চাহিদা মিটে যায়। বেসরকারিভাবে যে ঘাটতি হচ্ছে বা দুর্যোগের কারণে যদি কিছু হয়। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা যেটা বলছে তার জন্য আগাম পূর্ব সতর্কতা হিসেবে আমরা চাল আমদানি করছি। আমরা ১০ লাখ টন চাল আমদানি করবো সরকারিভাবে। তার মধ্যে সাড়ে পাঁচ লাখ টনের চুক্তি করেছি ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে। ইত্যোমধ্যে জাহাজগুলো আসতেছে আনলোড হচ্ছে। বাকিগুলো যেটা আছে সেটা আমরা আমনের অপেক্ষায় আছি। আমন নামলে হয়তো দাম একটু কমবে। এরপর আমরা বাকিটা কিনবো এভাবেই আমরা সহায়তা করবো। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত না করে দেওয়ার পর আমাদের গমের যে চুক্তি রাশিয়ার সঙ্গে হয়েছে। সেখানে ৫ লাখ টন চুক্তি হয়েছে। ইত্যোমধ্যে দুইটি জাহাজ এসেছে। একটার ৫২ হাজার টন খালাস হয়েছে। আরেকটার ৫৫ হাজার টনের খালাস শুরু হয়েছে। প্রতি ১৫ দিন পর পর দুইটা করে জাহাজ আসতে থাকবে। এটা আমাদের চুক্তি। এক সঙ্গে সব জাহাজ যদি আসে তাহলে সমস্যা হবে, আমরা আনলোড করতে পারবো না। তাই বলতে পারি বাংলাদেশে কোন খাদ্য ঘাটতি হবে দুর্ভিক্ষ হবে না। আমার মনে হয় বাংলাদেশ অনেক শান্তিতে আছে এবং শান্তিতে থাকবো।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। আমরা সবদিক থেকেই লক্ষ্য করছি। চালের দাম ৪২ টাকা নির্ধারণ করা ঠিক হয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্ন উঠেছে। আমরা একটা জিনিস হিসেব করেছি। কৃষকের উৎপাদন কতো টাকা পড়ে। তার ওপর লাভ ধরেই আমরা দাম নির্ধারণ করেছি। আর আপনারা যেটা বললেন ৫০,৫৫ টাকা সেটাতো শেষ বাজারে। এর মাঝেতো অনেকগুলো পথ পেরিয়ে দাম বাড়ে। ৪২ টাকা যে দাম নির্ধারণ করেছেন সেটা কৃষকে স্বার্থ রক্ষা করেই করা হয়েছে। গতবারও আমরা ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। তারপরও আমরা লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি সংগ্রহ করতে পেরেছি। অতএব চিন্তা করার কিছু নেই। যে দাম নির্ধারণ করেছি এতে কৃষকরা সন্তুষ্ট থাকবে।
ধান এবং চালের উৎপাদন খরচ কতো পড়বে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে যে তথ্য পেয়েছি তাতে দেখা গেছে চালের উৎপাদন খরচ পড়বে ৪০ টাকার কাছাকাছি। সে হিসাব করে ২ বেশি ধরে ৪২ টাকা করা হয়েছে। আর ধানের উৎপাদন খরচ পড়বে ২৬ টাকা ৫০ পয়সা। সেহিসবে দেড় টাকা লাভ ধরে ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা। এই দামে কোন অবস্থাতেই কৃষকরা বঞ্চিত হবে না।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলে আমদানি করে হলেও পূরণ করা হবে এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কি উদ্যোগ নিয়েছে জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, আমরা সব সময় জয়েন্টলি কাজ করি। প্রতি মুহূর্তে খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে সবকিছু করা হয়। যখন খাদ্যমন্ত্রী বলে খাদ্য আমদানি করতে হবে তখন আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়কে বলি তারা আইপি দিয়ে দেয়। আমরা তখন দ্রুত আমদানির ব্যবস্থা করছি। যেকোনো সমস্যা আমরা সবাই মিলে সমাধান করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১,২০২২/আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা,
জিসিজি/এএটি