ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

কর্মমুখী শিক্ষা ক্যারিয়ারের বিরাট পুঁজি

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
কর্মমুখী শিক্ষা ক্যারিয়ারের বিরাট পুঁজি

ঢাকা: দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও বেকারত্ব বেশি। ফলে অফিস-আদালতে যোগ্য কর্মী সংখ্যা অপ্রতুল।

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু কর্মমুখী শিক্ষা। হাতে-কলমে কারিগরি শিক্ষা অর্জনে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মদক্ষতা অর্জন সহজ। অনেক সময় পুরো শিক্ষা অর্জন শেষ হওয়ার আগেই কাজে প্রবেশের সুযোগ থাকে। সোজা কথায় বলতে গেলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কর্মমুখী শিক্ষাই ক্যারিয়ারের বিরাট পুঁজি। তাই শ্রেণীকক্ষে অর্জিত শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি জ্ঞান অর্জন একে অপরের পরিপূরক।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজে গিয়ে কারিগরি শিক্ষার উদাহরণ চোখে পড়ে। প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় হোটেল রুমের আদলে একটি কক্ষ। শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে রুম সার্ভিসিং সিস্টেম। অপর একটি কক্ষে দেখা গেছে আন্তর্জাতিক মানের কিচেন রুম। শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত রান্না শেখায়। ঘরটিকে এমনভাবে সাজানো, দেখলে মনে হবে যেন কোনো বিলাসবহুল হোটেল। সেখানে শেখানো হচ্ছে অতিথিদেরকে অভ্যর্থনার কৌশল।

তেজগাঁও কলেজে এসব কারিগরি শিক্ষা নিতে এসেছেন বহু ছাত্র-ছাত্রী। তাদের মধ্যে একজন মারুফা নদী। বাবা-মা’র ইচ্ছা ছিল তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়াবেন। কিন্তু মেডিকেলে সুযোগ না পেয়ে নদী ভর্তি হয়েছেন তেজগাঁও কলেজের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। দ্বিতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থী বলেন, বাবা-মা’র ইচ্ছা চিকিৎসা পেশা হলেও আমার আগ্রহ ছিল এয়ার হোস্টেস বা এয়ারপোর্টের কোনো পেশায় যুক্ত হওয়াও। নিজের স্বপ্ন পূরণে তাই এই কোর্সে ভর্তি হই।

এখানে আমি নিজেকে আবিষ্কারের সুযোগ পেয়েছি। পড়াশোনার অংশ হিসেবে আমাকে অনেক হোটেল পরিদর্শন করতে হয়। এয়ারপোর্টের কাজকর্ম কীভাবে পরিচালিত হয়, সেটি দেখারও সুযোগ রয়েছে। আমার ইন্টার্ন শুরু হবে সপ্তম সেমিস্টারে। ভালো করলে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি পড়াশোনা শেষ করারও উপায় আছে। এটি আমার ক্যারিয়ার গড়ার পুঁজি বলেই মনে করি।

একই বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তানজীর ইসলাম। ইচ্ছা ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। কিন্তু এখন তিনি হোটেল ম্যানেজমেন্টে ক্যারিয়ার গড়তে চান। তার সঙ্গে কথা বলে কারিগরি শিক্ষায় কর্মমুখী হওয়ার বিভিন্ন কৌশল জানা গেল।

তানজীর পাঁচ তারকা মানের কোনো হোটেলের মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করতে চান। সুযোগ পেলে সরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যটন কর্পোরেশনে কাজ করতে চান। তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষা অর্জনে যেকোনো সেক্টরে কাজ করার সুযোগ হয়। দেশের বাইরেও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। বিদেশে বিভিন্ন কাজ পাওয়া যায়।

জানা গেছে, দেশের ১০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কিছু বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অন্তত দশটি কলেজে কারিগরির সম্মান বর্ষে পড়ালেখা হয়। মানবসম্পদ, হোটেল ম্যানেজমেন্টে, ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগে পড়াশোনা করে দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন বহুজন। কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ বাড়তে থাকায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী বছর থেকে মাস্টার্স কোর্স চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে।

মূলত পড়াশোনা শেষে দেশি-বিদেশি তারকা হোটেল, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর, এয়ারলাইন্স, ক্রুজ লাইন, রেস্টুরেন্ট, পর্যটনের সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ বাড়াতেই এ শিক্ষাকে উচ্চতর স্থানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

তেজগাঁও কলেজ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজটিকে বলা হচ্ছে পথপ্রদর্শক। আমাদের প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঁচ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আছে। ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করা বিভাগটি থেকে ৩৫ শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করেছেন। সবাই চাকরি করছেন। কেউ এয়ারলাইন্সে, কেউ আবার পাঁচ তারকা হোটেলে কাজ করছেন। অনেকে নিজেই উদ্যোগী হয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় শুরু করেছেন। কারিগরি শিক্ষা কখনও বিফলে যায় না। ফল আসবেই। তাই আমরা বলতে চাই শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি জ্ঞান একে অপরের পরিপূরক। কর্মমুখী শিক্ষায় ক্যারিয়ারে বিরাট পুঁজিও অর্জন করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
এমএমআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।