ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূরের মৃত্যুর প্রতিবাদে আপাতত কোনো কর্মসূচি দেবে না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এ কথা জানান।
তারা জানান, শিক্ষার্থীদের মনে যে প্রশ্নগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল, ডিবি এবং র্যাব প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে সেই প্রশ্নগুলোর মোটামুটি সন্তোষজনক উত্তর পেয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে তার মৃত্যু নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহের সৃষ্টি হলে আবারও কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সহপাঠী ফারদিনের মৃত্যু নিয়ে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাই ধারণা করেছিল ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে। গত এক মাস ধরে যেসব তথ্য প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল তার ভিত্তিতে এ ধারণা আরও বেগবান হয়। পরে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ডিবির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ফারদিন আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। এটা মেনে না নিয়ে আমরা এর পরের দিনই প্রতিবাদ সভা করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। পরে ডিবি কার্যালয় যাওয়ার জন্য আমরা সে প্রতিবাদ সভা স্থগিত করেছিলাম। পরে আমরা ডিবি এবং র্যাবের কার্যালয়ে গিয়ে মোটামুটি ৫টি প্রধান প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই। প্রশ্নগুলো হলো-
১) পোস্টমর্টেমের পর ডাক্তার বলেছিলেন ফারদিনের বুকে এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল, তাহলে এ মুহূর্তে এসে কিভাবে আত্মহত্যার আলাপ আসে?
২) সিসিটিভি ফুটেজে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে সে ব্যক্তি যে ফারদিন তার গ্যারান্টি কি?
৩) ফারদিন যে ঐদিন রাতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছিল তার কোনো সলিড প্রমাণ আছে কিনা?
৪) যে লেগুনার ড্রাইভার অনেকদিন আগে ফারদিনকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিল সে কিভাবে এটা মনে রেখেছে?
৫)মাদক, ছনপাড়া বস্তি ও নারায়ণগঞ্জের ব্যাপার আসলো এসব কাহিনির ভিত্তি কি?
মাথায় এবং বুকে আঘাতের প্রশ্নের উত্তরের ডিবি থেকে জানানো হয়, যে ডাক্তার পোস্টমর্টেম করিয়েছিল তাকে পরে জিঙ্গাসা করলে তিনি বলেছেন ফারদিনের শরীরে যে আঘাতগুলো ছিল সেগুলো অনেকটা কিল-ঘুষির মতো। কোনো কাটা চিহ্ন ছিল না, রক্ত জমাটের মতো আঘাত ছিল। এ ধরনের আঘাত উপর থেকে পানিতে লাফ দেওয়ার কারণে পানির স্রোতের সঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে বা লাফ দেওয়ার সময় আঘাতের কারণেও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিসিটিভির ফুটেজের ব্যক্তির ব্যাপারে ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ফারদিন যাত্রাবাড়ী থেকে যে লেগুনায় উঠেছিল সেটি তাকে সুলতানা কামাল ব্রিজের অপর পারে নামিয়ে দেয়। পরে ফারদিনের মোবাইল ব্রাউজিং ডাটা ট্রাক করে দেখা যায় সে ব্রিজের অপর পাশ থেকে আবার ব্রিজের মাঝামাঝি চলে আসে এবং সিসিটিভি ফুটেজে যে স্থান থেকে ব্যক্তিটি লাফ দিয়েছিল ফারদিনের লোকেশন ট্র্যাক করে দেখা যায়, ফারদিন ঠিক ওই জায়গায় অবস্থান করতে ছিল এবং ঐ সময়ের পরপরই ফারদিনের মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়।
তৃতীয় প্রশ্নের জবাবে ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফারদিনের মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে এবং ফারদিনের সঙ্গে ওই সময়ে যাদের ফোনে এবং চ্যাটে কথা হয়েছে তারা জানিয়েছে ফারদিন খুব স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেছে এবং তাদের মনে হয়নি কোনো অ্যাবনরমাল কোনো কিছু ছিল অন্য কেউ কথা বলতেছিল।
লেগুনার ড্রাইভারের মনে রাখার ব্যাপারে ডিবি জানায়, ওই লেগুলার ড্রাইভারকে পুলিশ প্রথমে নজরদারিতে রাখে এবং পরবর্তীতে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায়, ঐদিন রাতে গাড়িতে কে উঠেছিল এ ব্যাপারে তার বিস্তারিত মনে নেই, তবে ঐদিন রাতে সে ছয়জন যাত্রী নিয়ে রওনা দেয় এবং ব্রিজ পার হয়ে তারাবো বাজারের সামনে কম দূরত্বের দুইটা লোকেশনে দুজন যাত্রীকে নামিয়ে দেয়। পুলিশ ধারণা করেছে এই দুইটা লোকেশনের মধ্যে যে কোন একটা লোকেশনে ফারদিন নেমেছিল।
মাদক এবং ছনপাড়া বস্তির ব্যাপারে ডিবির কাছ থেকে কোন তথ্য পায়নি শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে র্যাব শিক্ষার্থীদেরকে যে তথ্য দিয়েছে তা হলো, র্যাব মূলত ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনা হত্যাকাণ্ড নাকি কোন দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু নাকি আত্মহত্যা এ তিনটা সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করে।
প্রাথমিকভাবে ফারদিনের রবি সিমের লোকেশন ট্র্যাক করে দেখতে পায় সিমটি এমন একটা সেলে কানেক্ট হয় যে সেল ছনপাড়া বস্তি এবং সুলতানা কামাল ব্রিজের অংশটুকু কাভার করে। যেহেতু ব্রিজের অংশটুকুর চেয়ে ছনপাড়া বস্তি বড় এরিয়া এবং ছনপাড়া বস্তির ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিল তাই র্যাব প্রাথমিকভাবে তদন্ত করার ক্ষেত্রে ছনপাড়া বস্তিকে টার্গেট করে। ছনপাড়া এলাকা থেকে অনেক সন্ত্রাসী নিজেরা এসে দাবি করে তারা ফারদিনকে হত্যা করেছে। সেই হিসেবে র্যাব তদন্ত করে পরে হত্যার সঠিক কোনো তথ্য পায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
এসকেবি/জেএইচ