ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষামন্ত্রীকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

ইসমাইল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১২
শিক্ষামন্ত্রীকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

ঢাকা: সরু গলি ধরে শহরতলীর একটি স্কুলে শিক্ষামন্ত্রী আসবেন, আমাদের কথা শুনবেন, এটা ছিল আকাশ কুসুম কল্পনা। কিন্তু সেই কল্পনাকে মিথ্যে করে তিনি এসেছেন।

আপনার আগমনে ধন্য আমাদের এই প্রাঙ্গণ।

ঢাকার অদূরে ডেমরা মাতুয়াইল ইউনিয়নের পাড়াডগার গ্রামের সামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষামন্ত্রীকে কাছে পেয়ে এভাবেই আবেগ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থী মাহাদী ইসলাম ধ্রুব।

মাহাদী এবং অপর শিক্ষার্থী নিগার সুলতানার মানপত্র পাঠের সময় আবেগপূর্ণ শব্দের ফাঁকে ফাঁকে সৃষ্টি হয় পিনপতন নীরবতা। উপস্থিত সবার চোখের কোনায় তখন আনন্দের অশ্রু।

২০১২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সারা দেশের দ্বিতীয় স্থান লাভ করে সামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

শুধু মাহাদী ও সুলতানা নয়, শিক্ষামন্ত্রীর আগমনে আবেগ-আনন্দে উচ্ছ্বসিত এই প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী। শিক্ষর্থীদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-অভিভাবকেরাও আনন্দে উদ্বেলিত।

প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই যুগের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় দেশের দ্বিতীয় স্থান লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি। এ উপলক্ষ্যে বুধবার সকাল ১০টায় স্কুল প্রাঙ্গনে আয়োজন করা হয় ‘স্বর্ণোজ্জ্বল ফলাফল আনন্দ ঝিলমিল’ নামের এক সাড়ম্বর অনুষ্ঠান।

সকাল থেকেই যেন স্কুল প্রাঙ্গণে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করে। স্কুলের বাইরে সরু রাস্তায় সাদা ও নেভি ব্লু রঙের ইউনিফর্মে ছেলে-মেয়েরা ফুলের পাপড়ি আর রিমিঝিমি জরি হাতে দাঁড়িয়ে থাকে শিক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে।

শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি বহর যখন সরু গলি ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলো ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অন্যরকম ভালোবাসা আর আতিথেয়তায় মুগ্ধ মন্ত্রী এক সময় গাড়ি থেকে নেমেই হাটতে শুরু করলেন।

মঞ্চে উঠেই শত শত হাতের করতালির জবাবে হাত নেড়ে হাস্যোজ্জল জবাব দেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। তখনও শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর আনন্দ যেন থামছেই না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি পশ্চাদপদ এলাকার একটি প্রতিষ্ঠান দেশের সেরাদের দ্বিতীয় স্থান লাভ করায় অভিনন্দন জানান। এই গৌরবকে ধরে রাখতে আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।

যেখানে শহরের চাকচিক্য নেই, রাস্তা-ঘাট অনুন্নত, সেখানকার আধো শহর, আধো নগরের ছোঁয়া পেয়ে মাতুয়াইল ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষককের সাহচার্যে ভবিষ্যতকে সুন্দর করার স্বপ্নে বিভোর।

গ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্ক্রম দেশের জন্য মডেল হতে পারে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমি যেখানেই যাব সেখানেই আপনাদের সাফল্যের কথা তুলে ধরবো। ”

১৯৮৯ সালে আলহাজ্ব সামসুল হক খান নামের এক ব্যক্তি নিজের ২৬ কাঠা জমিতে এলাকার শিক্ষানুরাগীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন স্কুলটি। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের হাল ধরেন ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা। ২০০৪ সাল থেকে প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় থানার নির্ধারিত কোঠার সিংহভাগ বৃত্তি লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি সবার দৃষ্টি কাড়ে।

সাফল্যের এই ধারায় ২০০৮ ও ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে যথাক্রমে সপ্তম ও ষষ্ঠ স্থান অর্জন করে। এসএসসি পরীক্ষায় ২০১২ সালে দেশের সেরাদের দ্বিতীয় স্থান করে নেয়।

প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাসের ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সাল থেকে স্কুলটিতে মেয়েদের জন্য কলেজ শাখা খোলা হয়। ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তারা শতভাগ পাসসহ ঢাকা বোর্ডে তৃতীয় স্থান লাভ করে। এইচএসসি পরীক্ষায় ২০০৭ সালে প্রথম, ২০০৯ সালে চতুর্থ এবং ২০১২ সাল পর্ন্ত সেরাদের তালিকা ধরে রাখে।

শুধু একাডেমিক কার্ক্রমই নয়, সহ শিক্ষা কার্ক্রমেও এগিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। স্কাউটে তিন শিক্ষার্থী আমিনা ইসলাম আন্নি, জান্নাতুল মাওয়া ও সামিয়া জাহান সর্বোচ্চ পদক রাষ্ট্রপতির অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।

অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখছে শিক্ষার্থীরা। এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষকের প্রচেষ্টা, শিক্ষার্থীদের ঐকান্তিক চেষ্টা এবং অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সভাপতি হাবিবুর রহমান মোল্লার সহযোগিতা-সচেতনতা তাদের এই ধারাবাহিক সাফল্য।

অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ভালো ফলের জন্য ক্লাসে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি, সময়সূচি মেনে অনুশীলন, পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই, শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ, দুর্বলতা দূর করার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া জান্নাতুল মাওয়া নামে এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলের পরিবেশটাই অন্যরকম। এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাইরে প্রাইভেট পড়তে দেওয়া হয় না। পরীক্ষার ফল অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনো শিক্ষার্থী একটি ক্লাস ও স্কুল কোচিংয়ে অনুপস্থিত থাকলে ওই দিনই সন্ধ্যায় তা অভিভাবকের মোবাইলে খুদেবার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হতো। পরীক্ষায় খারাপ ফল ও স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে স্কুল কর্তৃপক্ষ জবাব চায়। এসব আয়োজনের জন্যই সাফল্য।

২০১২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৫০২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। বিজ্ঞান বিভাগে ১৭৮ জন পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৭৭ জন, মানবিক বিভাগে ৭৪ জন পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২৫০ জন পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৩৪ শিক্ষার্থী।

স্থানীয় মাতুয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বলেন, মফস্বলে থেকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ভালো রেজাল্ট করে আসছে। আমরা স্কুলটিকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। শুধু ঢাকা বোর্ডে নয়, সারা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করার প্রত্যাশায় আমরা আছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১২
এমআইএইচ/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।