ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বাংলাদেশের রাশেদ নিউইয়র্ক স্কুল পরিচালনা টিমের সদস্য

লাবলু আনসার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১২
বাংলাদেশের রাশেদ নিউইয়র্ক স্কুল পরিচালনা টিমের সদস্য

নিউইয়র্ক : নতুন শিক্ষা বর্ষে (৬ সেপ্টেম্বর শুরু)নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলের নীতি-নির্ধারণীতে এক বাংলাদেশি তরুণও অংশ নিচ্ছেন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো বেশী উপযোগী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় অধিক মনোযোগী করতে ২০ সদস্যের একটি যুব টিম গঠন করেছেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ।



সিটির ১৭০০ পাবলিক স্কুলের ১১ লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে এবারই প্রথম এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়-  স্কুল সিস্টেম, স্কুল পরিচালনায় ছাত্র-ছাত্রীদের মতামত ব্যক্ত হবে এ টিমের মাধ্যমে।

মেয়রের ‘‘ইয়ুথ লিডারশিপ প্রোগ্রাম’ নামের  এ টিমে দক্ষিণ এশিয়ানদের মধ্য থেকে রয়েছেন একমাত্র বাংলাদেশি রাশেদ এ মজুমদার। এ সংবাদটি প্রকাশের পর তা টক অব দ্য কম্যুনিটিতে পরিণত হয়েছে।

কারণ, এটি হচ্ছে বিরাট একটি অর্জন উঠতি কম্যুনিটির জন্যে। ১৪৩ ভাষাভাষীর মানুষ বাস করেন বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত এই সিটিতে। তার মধ্যে নবম বৃহত্তম ভাষাভাষী হচ্ছেন বাঙালিরা। এ টিমে এশিয়ার মধ্যে ৩ জনের একজন হলেন রাশেদ মজুমদার।

দ্বাদশ গ্রেডের ছাত্র রাশেদ মজুমদার এ টিমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন গত বছর। সে সময় রাশেদ ছিলেন একাদশ গ্রেডের ছাত্র। মেধা, সাংগঠনিক যোগ্যতা এবং কম্যুনিটিতে নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাছাই করা হয়েছে।

২০১১ সালটি কেটেছে লিডারশিপ নেতৃত্ব সম্পর্কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এছাড়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথেও একান্ত বৈঠকে মিলিত হয়েছেন টিমের সদস্যরা। আর এ বছর তারা সিটির শিক্ষা বিভাগকে আরো গতিশীল করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উপদেশ দেবেন মেয়রসহ শিক্ষা বিভাগের নীতি-নির্ধারকদের।

রোটারি ক্লাব সেন্ট্রাল ব্রঙ্কসের সাবেক সভাপতি রাশেদ মজুমদার এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন,  ইমিগ্র্যান্ট কম্যুনিটির সদস্য হিসেবে আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করছি যে, নবাগত ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস চলাকালে এক ধরনের অসহায়ত্বে আক্রান্ত থাকে। নতুন পরিবেশ, অচেনা ভাষা এবং একেবারেই ভিন্ন ব্যবস্থায় তারা নিজেকে একা বোধ করেন। ইংরেজিতে যারা দুর্বল তারা মনে করেন এ পরিবেশে খাপ খাওয়ানো একেবারেই অসম্ভব।

রাশেদ মজুমদার বলেন, কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে কোনটিই অসম্ভব নয়। সবকিছুই সম্ভব। তবে মনোযোগী হতে হবে। আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। তার প্রমাণ রয়েছে ভুরি ভুরি। নবাগত ইমিগ্র্যান্ট ছাত্র-ছাত্রীর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নিউইয়র্ক সিটির ভালো স্কুলে চান্স পাচ্ছে। ভালো রেজাল্ট করছে।

রাশেদ মজুমদার বলেন, শিক্ষকের লেকচারকে গভীরভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। বুঝতে না পারলে হাত উঠিয়ে পুনরায় জানতে চাইতে হবে। রাশেদ মজুমদার অবশ্য নিজের অভিজ্ঞতায় উল্লেখ করেন, বর্তমানের শিক্ষা পদ্ধতিতে কিছুটা ক্রুটি রয়েছে। তা হচ্ছে ছাত্রের সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করা।

ক্লাসের প্রতিটি ছাত্রের সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক নিবিড় থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ছাত্র-ছাত্রীরা নির্ভয়ে কৌতুহল দমাতে পারবে। যে বিষয়টি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তা বারবার জানতে পারবে। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীর ব্যাকগ্রাউন্ড জানা থাকলে শিক্ষকের পক্ষে ঐ ছাত্রকে পড়া বোঝানোও সহজ হবে। ভাষাগত দুর্বলতাও একইভাবে কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলে মনে করেন রাশেদ মজুমদার।

রাশেদ মজুমদার বলেন, পাবলিক হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সেলফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হওয়া দরকার। অনেক জরুরী প্রয়োজনে তারা সেলফোন ব্যবহারে সক্ষম না হলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। এ ব্যাপারেও তিনি তার মতামত ব্যক্ত করবেন শিক্ষা বিভাগে।

নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলসমূহে বাংলা ভাষী ছাত্রÑছাত্রীর  সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এদের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থার সুপারিশ থাকবে বলেও উল্লেখ করেন রাশেদ মজুমদার। তিনি বলেন, দুই ঈদে ছুটির চেষ্টা চলছে বহুদিন যাবত। আমিও চেষ্টা চালিয়ে যাবো। তবে কম্যুনিটি লিডারদের চাপ রাখতে হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর।

নিউইয়র্কের বিশিষ্ট কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট এবং ইমিগ্র্যান্টস রাইটস এডভোকেট এন মজুমদারের পুত্র রাশেদ মজুমদার ম্যানহাটানের হাই স্কুল অব গ্রাফিক কম্যুনিকেশন একাডেমি অব ল’র ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি নতুন এ দায়িত্ব পালন করবেন এবং এজন্যে তিনি ভাতাও পাবেন।

ব্রঙ্কসের অধিবাসী রাশেদ মজুমদার গত বছর জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত পৃথিবীব্যাপী রোটারী ক্লাবসমূহের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইন্টারেক্টরদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন এবং তা সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। রোটারী ইন্টারন্যাশনালের ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং ও ইন্টারেক্ট গেস্ট স্পীকার  হিসেবেও তিনি অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখার সুযোগ পান জাতিসংঘের ঐ উচ্চ পর্যায়ের ফোরামে।

ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারের প্রবীণতম প্রবাসী আলহাজ্ব নূরুজ্জামান ভূইয়া হচ্ছেন রাশেদ মজুমদারের নানা। তার মা রেক্সনা মজুমদারও রোটারী ক্লাবের সদস্যা। রাশেদ মজুমদার হিউম্যান রাইটস আইনজীবী হতে চান।

বাংলাদেশ সময় : ০২২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭,  ২০১২
সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর  
[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।