ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

একাধিক সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ

কাওছার হোসেন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১২
একাধিক সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ

বরিশাল: আবাসন, শিক্ষক সংকট, পরিবহনসহ একাধিক সমস্যায় জর্জরিত বরিশালের একমাত্র সরকারি মহিলা কলেজ।

তবে, এসব সমস্যা সমাধানে অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমনকি কলেজটি ‘মডেল কলেজ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্স বিষয়ে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৫৭ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু করে বরিশাল মহিলা কলেজ।
এ কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন নারী নেত্রী মনোরমা বসু। স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশাল মহিলা কলেজকে সরকারি ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৬ সালে ৮টি বিষয়ে এ কলেজে প্রথম অনার্স (সম্মান) কোর্স চালু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে দুটি বিষয়ে শুরু হয় মাস্টার্স কোর্স।

অবকাঠামোগত বিবরণ: বরিশাল নগরীর সাংবাদিক মাইনুল হাসান সড়ক (আগরপুর রোড) এলাকার ৬ একর ১৬ শতাংশ জমির ওপর স্থাপিত বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে নানান স্থাপনা।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অধ্যক্ষ ভবন, প্রশাসনিক ভবন, কলা ভবন, নতুন বিজ্ঞান ভবন, পুরনো বিজ্ঞান ভবন এবং সমাজকর্ম ভবন।

এছাড়াও রয়েছে- মসজিদ, ক্যান্টিন, ডাকঘর, গ্রন্থাগার, শহীদ মিনার, উদ্যান, দৈশিক চেতনা মঞ্চ, খেলার মাঠ ও বকুলতলা, উন্মুক্ত স্থায়ী মঞ্চ।

পাঠদানের বিষয়: বরিশাল সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। পরে খোলা হয় অনার্স (সম্মান) বিষয়। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, সমাজকর্ম, অর্থনীতি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান।

তবে, আগামী বছর আরও ৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করার কথা জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রক্রিয়াধীন নতুন বিষয়গুলো হলো- রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাস।

মাস্টার্সে মাত্র দুটি বিষয় চালু রয়েছে। বিষয় দুটি হলো- বাংলা ও সমাজকর্ম। তবে, আপাতত মাস্টার্সে নতুন কোনো বিষয় চালু করার পরিকল্পনা নেই কলেজ কর্তৃপক্ষের।

শিক্ষক ও জনবল: বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষকের পদ রয়েছে ৬২টি। এর মধ্যে বর্তমানে শূন্য ৪টি। শিক্ষকের শূন্য পদগুলো হলো- বাংলা বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপকের পদ, রসায়ন বিভাগে ২ প্রভাষকের পদ, গণিত বিভাগে ১ প্রভাষকের পদ এবং সমাজকর্ম বিভাগে ১ প্রভাষকের পদ।

শিক্ষক ছাড়া অন্য জনবলের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ৬ জনের স্থানে রয়েছে ৪ জন। এছাড়া ২ জন সুইপার এবং ৪৪ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সার্বক্ষণিক কর্তব্য পালন করছেন।

আবাসিক ব্যবস্থা: সরকারি মহিলা কলেজের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র দুটি আবাসিক ছাত্রীনিবাস রয়েছে। এর আসন সংখ্যাও সীমিত। হল দুটির একটি ক্যাম্পাসে এবং অপরটি নগরীর গোড়াচাঁদ দাস রোডে অবস্থিত। হল দুটির নাম হচ্ছে যথাক্রমে রওশন জাহান ছাত্রীনিবাস ও কবি সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাস।

ক্যাম্পাসের অবস্থিত রওশন জাহান ছাত্রীনিবাসের আসন সংখ্যা মাত্র ৩শ ২০টি। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্রীরা থাকেন। আর কবি সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাসে থাকেন অনার্স ও মাস্টার্সের ছাত্রীরা। এ ছাত্রীনিবাসের আসন সংখ্যা মাত্র ১শ ১০টি। অথচ, এ দুটি হলের ৪শ ৩০টি আসনের বিপরীতে এখানে থাকছেন প্রায় দেড় হাজার ছাত্রী।

প্রতিবছর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে হলে থাকা বাবদ আড়াই হাজার টাকা নেওয়া হলেও হলগুলোতে রয়েছে নানা সমস্যা। পানি, বিদ্যুৎ, বাথরুম, জায়গা সংকুলান ও নিরাপত্তার সমস্যা অন্যতম।

কবি সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাসের অনার্স ৩য় বর্ষের বাংলা বিভাগের ছাত্রী জেসমিন আক্তার বাংলানিউজকে জানান, একটি রুমে ৪ জন থাকার কথা। কিন্তু এখানে রয়েছে ৮ থেকে ১০ জন।

তিনি জানান, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলে তো একটি কক্ষে ১৫ জনও থাকতে হয়।

একই ছাত্রীনিবাসের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী নাজনিন রহমান বাংলানিউজকে জানান, হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই নাজুক। একজন নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও তার চোখের সামনে থেকেই স্থানীয় বখাটেরা অনায়াসে হলের ভেতরে প্রবেশ করে।

এছাড়া অধিকাংশ সময় বখাটে ছেলেরা হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে এবং ছাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে।

বাংলা বিভাগের অপর শিক্ষার্থী গৌরী চক্রবর্তী জানান, হলের বিভিন্ন কক্ষের দরজা-জানালা এবং জানালার কাচ ভেঙে গেছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ভেতরে ঢুকে বই-খাতা, জামা-কাপড়সহ সব মালমাল ভিজিয়ে দেয়। আবার শীতকালে ঠাণ্ডা বাতাস আর কুয়াশা ভেতরে ঢুকে সবার ঘুম হারাম করে দেয়।

রওশন জাহান ছাত্রীনিবাসের তানিয়া তৃপ্তি বাংলানিউজকে জানান, হলের বাথরুমগুলো খুবই নোংরা। এমনকী অধিকাংশ বাথরুমের দরজায় ছিটকানি নেই। ফলে, বাথরুমে যাওয়ার আগে দরজায় অন্য এক জনকে পাহারায় রাখতে হয়, যাতে অন্য কেউ ঢুকতে না পারে।

একই ছাত্রীনিবাসের বৃষ্টি নওশিন জানান, পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা এখানে প্রকট। কক্ষে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। ফলে, পরীক্ষার সময় কঠিন সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো পরিবহন ব্যবস্থাও নেই ।

জাহানারা জেরিন নামে অপর এক শিক্ষার্থী জানান, হলে খাবারের মান খুবই খারাপ। মানসম্মত খাবার দেওয়া হয়না বললেই চলে।

কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: ছাত্রীদের নানা সমস্যার কথা অকপটে বাংলানিউজের কাছে স্বীকার করলেন সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ দুল আশয়ালী বেগম।

তিনি বলেন, ‘আবাসন ব্যবস্থায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে। তবে, ছাত্রীদের শিক্ষাদানে কোনো কমতি নেই। শিক্ষাদান শতভাগ নিশ্চিত করতে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন শিক্ষকরা। ’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রীদের ২০ জন করে দল ভাগ করে একজন শিক্ষককে একটি করে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতি মাসে পরীক্ষা নিচ্ছেন শিক্ষকরা। পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই-বাচাই করে ভুলগুলো শিক্ষার্থীদের ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে, চূড়ান্ত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারছেন তারা। ’  

উপাধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘২০১১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬৯ জন শিক্ষার্থী। ’

তবে, সাধারণ অভিভাবকদের অভিযোগ, টেস্ট পরীক্ষায় যে সব শিক্ষার্থী একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়, তাদেরও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়। যার ফলে, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি।

বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজকে ‘মডেল কলেজ’ হিসেবে গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সদ্য যোগদানকারী অধ্যক্ষ একেএম এনায়েত হোসেন।

তিনি বলেন, ‘এ কলেজটিকে মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যা যা দরকার, আমি তাই-ই  করবো। ইতোমধ্যে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাজেট দেওয়া হয়েছে। ’

একটি সুন্দর পরিকল্পনা করে সেই অনুযায়ী অগ্রসর হতে হবে বলে মনে করেন অধ্যক্ষ একেএম এনায়েত হোসেন।

পাঠক আগামীকাল বুধবার পড়ুন বরিশাল সরকারি বজ্রমোহন কলেজের প্রতিবেদন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১২
সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।