ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা সময়ে অস্থিরতা বিরাজ করলেও ব্যতিক্রম ছিল একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়(ঢাবি)। গত পাঁচ বছর সুষ্ঠুভাবে একাডেমিক কার্যকক্রম পরিচালিত হওয়ায় সেশনজট নেমে এসেছে
প্রায় শূন্যের কোঠায়।
কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ঢাবিতেও। হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে চলেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন পরিবহন।
শিক্ষার্থীরা না আসতে পারায় বিভিন্ন বিভাগের ক্লাশ বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। এদিকে অনবরত ক্লাশ বন্ধ থাকায় একাধিকবার পেছানো হয় কয়েকটি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা।
অন্যদিকে নভেম্বরের মধ্যে সবগুলো ইউনিটের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরি হয়। ‘খ’ ইউনিটের সাক্ষাতকারের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও অবরোধ থাকার কারণে দুইবার পেছানো হয়। ফলে শিক্ষা কার্যিক্রমে নেমে এসেছিল এক ধরণের স্থবিরতা। সেশন জটের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছিল।
তবে সেশনজটের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ঢাবির প্রো-ভিসি(শিক্ষা)অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘হরতাল অবরোধের ফলে যেটুকু ক্ষতি আমাদের হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে আমরা সক্ষম। এ জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়কেই দায়িত্ব নিতে হবে যাতে ক্লাশ পরীক্ষাগুলো ঠিক সময়ে সম্পন্ন হয়। ’
ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হরতাল অবরোধের সময় ক্লাশ না চললেও পরীক্ষা কিন্তু ঠিকই চলেছে। তারপরেও ক্লাশ বন্ধ থাকায় যে ক্ষতিটুকু শিক্ষার্থীদের হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে তাদেরকে নিয়মিত ক্লাশে উপস্থিত হতে হবে। শিক্ষকদেরও চেষ্টা করতে হবে যাতে তারা বেশি বেশি ক্লাশ নিতে পারেন। ’
বিভিন্ন অনুষদের ডিন অফিস ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষে অধিকাংশ বিভাগই নতুন সিমেস্টারের ক্লাশ শুরু করেছে। আর যেসব বিভাগের পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি, দ্রুত পরীক্ষা নেওয়া শেষে সেসব বিভাগের ক্লাশও অচিরেই শুরু করা হবে।
যোগাযোগ করা হলে ঢাবির প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: বাহালুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘অধিকাংশ বিভাগের পরীক্ষাই শেষ হয়েছে। যেসব বিভাগের পরীক্ষা বিভিন্ন কারণে পিছিয়েছিল তাদের পরীক্ষাও চলছে। ’
বিভিন্ন অনুষদের ডিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। এরইমধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে প্রথম বর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাশ শুরু হয়েছে চলতি বছরের ২য় সপ্তাহে। বিজ্ঞান অনুষদের ক্লাশও শুরু হচ্ছে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে।
কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ক্লাশও ফেব্রুয়ারির ১ম সপ্তাহ নাগাদ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্লাশ শুরু হয়েছে এমন কয়েকটি বিভাগে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক বেশি। একজন ক্লাশ টিচার জানান, উপস্থিতির হার প্রায় শতভাগ। অনিবার্য কারণ ছাড়া কেউ ক্লাশ মিস করছে না। সবাই তৎপর রয়েছে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর ক্লাশে ফিরতে পেরে শিক্ষার্থীদের মাঝেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তাদের পদচারণায় আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রিয় ক্যাম্পাস। বটতলা, হাকিম চত্ত্বর বা কার্জনের সবুজ চত্ত্বরে ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুদের সাথে মেতে উঠছেন আড্ডা-গল্পে। কেউ কেউ আবার বইপত্র নিয়ে লাইব্রেরিতে ছুটোছুটি করছেন। সবমিলিয়ে ক্যাম্পাস ফিরে ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রুপ।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মইন কাদির থাকেন মিরপুরে। দীর্ঘদিন পর ক্লাশে ফিরতে পারার অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভার্সিটি বন্ধ থাকলে বাসায় সময়টা খুব বিরক্তিকর কাটে। বন্ধুবান্ধব কারো সাথে দেখা হয়না। আড্ডা দিতে পারিনা। অনেক দিন পর ক্লাশে এসে সবার সাথে দেখা হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে। ’
একই বিভাগের আরো দুজন শিক্ষার্থী আয়েশা আফরোজা ও মালিহা তাবাসসুম। আয়েশার বাসা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টর বালুঘাট এবং মালিহার বাসা উত্তরায়। ক্যাম্পাস খোলা না থাকলে যাদেরকে বাসার চার দেয়ালেই বন্দি থাকতে হয়।
প্রায় দেড়মাস পরে ক্লাশে ফিরতে পারার আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘বাসায় বন্দি থাকতে কার ভালো লাগে। শিক্ষা আনন্দ আড্ডা সবইতো ক্যাম্পাসে। তাই ক্যাম্পাসে আসার অনুভুতিই আলাদা। ’
একই সাথে তারা আশা প্রকাশ করেন যে ভবিষ্যতে কোন রাজনৈতিক দল এরকম কোন কর্মসূচি দেবেনা যে কারণে ক্লাশ বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৪