ঢাকা: বিশিষ্ট সমাজতত্ত্ববিদ, জাতীয় অধ্যাপক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সমর্থক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. রংগলাল সেনের জীবনাবসান হয়েছে।
সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রামের সার্জিস্কোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বার্ধক্যজনিত রোগসহ কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-নাতনি এবং অসংখ্য প্রিয় ছাত্রছাত্রী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
রংগলাল সেনের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রংগলাল সেন ছিলেন একজন সমাজবিজ্ঞানী। তাঁর মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী রংগলাল সেনের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি সেক্রেটারি আশরাফুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শোকবার্তায় বলেন, রংগলাল সেনের মৃত্যুতে দেশ একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও গবেষককে হারালো, যার স্থান সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ও একাডেমিক পরিষদের সদস্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এবং দেশে সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার বিস্তার ও গবেষণায় তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।
‘সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মঞ্চ’ সমাজতত্ত্ববিদ রংগলাল সেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর বিদেহী আত্মার পারলৌকিক শান্তি কামনা, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।
অধ্যাপক ড. রংগলাল সেন ১৯৮৪ থেকে ৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯-১৯৮২ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন।
এছাড়া রংগলাল সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে নির্বাচিত ও মাননীয় চ্যান্সেলরের মনোনীত সদস্য হিসেবে সিনেট ও সিন্ডিকেটে কাজ করেন।
তিনি ১৯৮৬-৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সমাজ বিজ্ঞান সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন।
এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের আজীবন সদস্য ছিলেন।
ড. রংগলাল সেন শুধু বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা কার্যক্রমেই যুক্ত ছিলেন না, তিনি বেশ কয়েকটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নমূলক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
১৯৩৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের সদর থানার অন্তর্গত ত্রৈলোক্যবিজয় নামে গ্রামে এক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে অধ্যাপক রংগলাল সেনের জন্ম। তার বাবার নাম রমন চন্দ্র সেন এবং মা গিরিবালা সেন। তারা ১০ ভাইবোন।
রংগলাল সেন ‘সিভিল সোসাইটি’, ‘কলিকাতা কল্পলতা’, ‘বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’, প্রারম্ভিক সমাজবিজ্ঞান’ ‘বাংলাদেশের সামাজিক স্তরবিন্যাস’সহ অসংখ্য বইয়ের প্রণেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪/আপডেটেড: ১৮৫৩ ঘণ্টা/আপডেটেড: ২১১০ ঘণ্টা