ঢাকা: দেশের ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী আরও ৪৫ লাখ নিরক্ষর মানুষকে স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করতে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ৬৪ জেলার ২৫০ উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে এ প্রকল্প।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)’ নামের এ প্রকল্পের আওতায় দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠী মৌলিক স্বাক্ষর জ্ঞান ও প্রায়োগিক দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পাবেন।
সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের অঙ্গীকারের প্রেক্ষাপটেই প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে।
উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা (এনএফই) ম্যাপিং রিপোর্ট-২০০৯ অনুসারে, দেশে ১১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এই নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় আনার সুযোগ নেই।
উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে শিক্ষার দ্বিতীয় সুযোগ দিতে এই প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদকাল জুলাই ২০১৩ থেকে জুন ২০১৮ পর্যন্ত।
এছাড়া সভায় জয়দেবপুর সিজিএস-এ (সিটি গেইট স্টেশন) ৩০০ মিলিয়ন সিএফডি (ঘনফুট) গ্যাস প্রবাহ বাড়াতে ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে অপর একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, ঢাকা ইপিজেড এবং টঙ্গী এলাকায় গ্যাসের ঘাটতি পূরণ ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতেই এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড জুলাই ২০১৩ থেকে ডিসেম্বর ২০১৫ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
তিনি জানান, বৈঠকে ৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ৯৬১ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এরমধ্যে ৭৬৩ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে এবং ১৯৮ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে।
মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশে এখন কোনো বিদ্যুৎ সমস্যা নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। তবে আগে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে গ্যাসের যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা সমাধান হবে। ’
আর কোনো বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে গ্যাস ব্যবহার করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে গ্যাসের পরিবর্তে কয়লা ব্যবহার করা হবে।
এদিকে বৈঠকে ১১৮ কোটি ব্যয়ে ‘উন্মুক্ত জলাশয়ে বিল নার্সারি স্থাপন এবং পোনা অবমুক্তকরণ’ প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশের ৬০টি জেলায় পোনা তৈরি করে তা ভরা মৌসুমে পানিতে অবমুক্ত করা হবে। এতে দেশে মৎস্য চাহিদা পূরণ হবে।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প হল-৮৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে কন্সট্রাকশন অব এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো অফিস বিল্ডিং প্রকল্প।
এছাড়া অনুমোদন হয় ‘প্রোডাকশন অব ইলেকট্রিসিটি বাই কো-জেনারেশন অ্যান্ড এস্টাবলিসমেন্ট অব সুগার রিফাইনারি অ্যাট নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস’ প্রকল্প। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪