ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বিব্রত জাবি ছাত্রলীগ!

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৪
বিব্রত জাবি ছাত্রলীগ!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা (জাবি) ছাত্রলীগের জুনিয়র নেতাকর্মীদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে বিব্রত বোধ করেছেন সিনিয়র নেতারা।

এ সব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় দুই নেতাকে সাংগঠনিকভাবে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করেছেন তারা।



সম্প্রতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের জুনিয়র নেতাকর্মীরা রিকশা চালক ও নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর, চাঁদাবাজি এবং হলে মেয়ে নিয়ে যাওয়া-আসাসহ বেশ কিছু নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েছেন।

আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের জুনিয়র নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটেছে।

এর মধ্যে মধ্যে কেবল শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ছাত্রলীগের এক নেতাকে বহিষ্কার ও চাঁদাবাজির ঘটনায় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে দায় সেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বৃদ্ধ রিকশা চালকসহ দুই নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর করে ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও পরিসংখ্যান বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বশিরুল হক এবং ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মহিতোষ রায়।

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দীপু নিরাপত্তা কর্মীদের মারধরের নির্দেশ দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

ওই রাতেই ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায়ের বিরুদ্ধে মীর মশাররফ হোসেন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে নিয়ে রাত যাপনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিলেও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ মহিতোষকে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করে।

মহিতোষ রায় ইতোপূর্বে দায়িত্বরত বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যদের মারধরের ঘটনায় এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। বহিষ্কারের ছয় মাস পর সিন্ডিকেট ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রলীগের সাহিত্য সম্পাদক সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের দিয়ে চাঁদাবাজি করানোর অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভির আহমেদ ও মীর মশাররফ হোসেন হলের সাধারণ সম্পাদক আসফিক সরকারের নামও শোনা যায়।

চাঁদাবাজি করার সময় আটক হওয়া বহিরাগত হিমেল জানান, সানোয়ার হোসেনের নির্দেশে তারা ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ডেইরি গেটে পার্ক করা প্রতিটি গাড়ি থেকে তিনশ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সানোয়ার হোসেন, তানভির আহমেদ ও আসফিক সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

এর আগে ২৩ জানুয়ারি নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি গোলাম মইনুদ্দিনকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মামুন খানকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করে ডিসিপ্লিনারি বোর্ড।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ মামুন খানকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করে।

ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বই কেনাকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কিছু ছাত্রলীগ কর্মীর আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের ছাত্রলীগ কর্মী পরশ ও মুশফিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে।

পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নেতাকর্মীরা ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রলীগের তথ্যকেন্দ্রের সামনে পরশ ও মুশফিককে মারধর করেন। এরপর দুই হলের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে।

এ ঘটনায় আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন আখন্দ বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাতজনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেন।

পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পক্ষ থেকে মামলা করতে গেলে আশুলিয়া থানা তাদের মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি বুলবুল আহমেদ।

এ ঘটনাতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ব্যবস্থা নেয়নি ছাত্রলীগও।

জুনিয়র নেতাকর্মীদের এ ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নেতাকর্মীসহ কেন্দ্রীয় ও সারাদেশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিব্রত হয়েছেন।

ভর্তি পরীক্ষার সময় তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু ছাত্রলীগই নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকেই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ছাত্রলীগের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপত্তা কর্মীদের মারধরের ঘটনাটি সামাজিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মিলে সমাধান করেছেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দু/একদিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রলীগ কোনো ধরনের অপকর্মকে প্রশ্রয় দেবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ বলেন, নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন করে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রক্টর অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।