বুয়েট: একদিন এই ক্যাম্পাসই ছিল তাদের সব। খেলাধুলা, আড্ডা, গান-বাজনা, হৈ- হুল্লোড় সবকিছু।
এভাবেই কেটেছে ক্যাম্পাসের সোনালী দিনগুলো। আজ তারা সবাই সাবেক হয়েছেন। ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কর্ম ও পারিবারিক জীবন নিয়ে। কিন্তু প্রিয় ক্যাম্পাসের মায়া কাটাতে পারেননি কেউই।
তাইতো সুযোগ পেয়েই শত কর্মব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা শুক্রবার মিলিত হয়েছেন তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে। আজ ছিল তাদের মহা-পুনর্মিলনী।
আর এই পুরো অনুষ্ঠানটির ‘প্লাটিনাম স্পন্সর’ হিসেবে ছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা সিমেন্ট।
হারানো দিনের সোনালী স্মৃতির মাঝে আজ তারা বিচরণ করছেন মনের আনন্দে। পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ক্যাম্পাসের প্রতিটি আনাচে-কানাচে। মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন তাদের সেই প্রিয় ক্যাম্পাসটি।
ক্যাম্পাসের যে গাছটির ডগা ক্রিকেট বলের আঘাতে ঢলে গিয়েছিল আজ সে গাছ আকাশ ছুঁইছুই করছে। যেখানে সবুজ ঘাষের ওপর জমতো রাত্রিকালিন আড্ডা বা গান-বাজনা, সেখানে আজ বিশাল অট্টালিকা! সবকিছু দেখে চোখে কেমন ধাঁধা লাগছে। আবার মেনে নিচ্ছেন বাস্তবতাকেও। কারণ সবকিছু একইভাবে পড়ে থাকলে সভ্যতা এগোবে কি করে। নতুন নতুন অট্টালিকা না হলে তাদেরই বা কদর কোথায়!
কেউবা পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পেয়ে মেতে উঠছেন খোশ-গল্পে। কতদিন পরে দেখা, কতকিছুই না বলার আছে বন্ধুকে! জানারও যে আছে অনেক কিছু…। ‘এই তোর সেই ছোট্ট সোনামনিটা আজ কত বড় হল রে, কোথায় পড়াশুনা করছে?..ওমা সেকি এরই মধ্যে বিয়েও দিয়ে দিয়েছিস? কই একটিবার খবরওতো দিলিনা… তা ছেলে কি করে?’ এরকম হাজারো গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেছেন বান্ধবীরা।
বন্ধুরাই বা কম কিসে! তাদের মনেও কি কম কথা জমেছে। মোবাইল ফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ হয় বটে কিন্তু সাক্ষাতে বন্ধুকে পেলে সে সবের কি আর মূল্য থাকে।
বুয়েট মাঠের পূর্বপাশে স্থাপিত স্মৃতিচারণ মঞ্চের সামনে কফি খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছিলেন দুই বন্ধু। তারা দু’জনেই বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী, তবে তাদের ব্যাচ ও বিভাগ আলাদা। কর্মসূত্রে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।
একজন মো: আবুল কালাম খান অন্যজন জাফর আহমেদ খান। প্রথমজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৯৭৭’র ব্যাচ, কর্মরত ছিলেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে। অবসর গ্রহণ করেছেন আরো চার বছর আগে। দ্বিতীয় জন ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৯৮০’র ব্যাচের ছাত্র। বর্তমানে কর্মরত আছেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে।
দুই
খানের গল্পের মাঝে বাঁধ সাধলেন এই প্রতিবেদক। তাদের গল্পে সাময়িক ব্যাঘাত ঘটলেও কথা বলতে বিরক্ত হলেন না। হাসিমুখেই কথা বললেন।
আবুল কালাম খান বাংলানিউজকে বললেন, এই যে মাঠে আমাদের পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছে, এখানে নিয়মিত খেলাধুলা করতাম আমি। কত হুড়োহুড়ি দৌড়াদৌড়ি করেছি। তখন সবকিছু নিজের মনে হত। আজ সেই একই মাঠে আবার এসেছি। কিন্তু কেন জানি সব কিছু আর নিজের মনে হচ্ছে না। নিজেকে একজন অতিথির চেয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারছি না।
তবে সোনালী দিনের স্মৃতিগুলো এখন তার অবসর জীবনের অন্যতম সঙ্গী বলেও জানালেন তিনি।
আবু জাফর খানের কণ্ঠেও অভিন্ন সুর। তবে আর দশটা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে এই দিনটা যে সত্যিই আলাদা, সে অনুভূতির কথা জানাতে ভুল করলেন না তিনি।
সবাই যখন নিজের কাছের বন্ধু বা ব্যাচের সহপাঠীদের কাছে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা, তখন সেখানে ভিন্ন চিত্রও চোখে পড়ল। অনেকে নিজের কাছের বা ব্যাচের কাউকে না পেয়ে মনঃক্ষুন্ন হয়ে বসে ছিলেন।
এমনই একজন স্থপতি ফারজান সমিরুদ্দিন। তিনি স্থপত্য বিভাগের ১৯৮৭ ব্যাচের ছাত্রী। বর্তমানে কর্মরত আছেন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরে। নিজের কাছের কাউকে না পেয়ে তিনি গল্প করে সময় কাটাচ্ছিলেন অন্য একজনের সঙ্গে।
তিনি বললেন, ‘ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কাজে প্রায়ই আসা হয়। কিন্তু তারপরেও অন্যান্য দিনের তুলনায় বছরের এই দিনটা একটু আলাদা। কারণ সবার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ এই একটা দিনেই পাওয়া। যায়। ’
তবে দুপুর পর্যন্ত তার কোন বন্ধু বা ব্যাচের কোন সহপাঠীকে খুঁজে না পেয়ে তিনি কিছুটা মনঃক্ষুন্ন রয়েছেন। যার যার কাজ সেরে সন্ধ্যা নাগাদ বন্ধুদের অনেকেই আসবেন বলেও জানালেন তিনি।
এদিকে সকালে অনুষ্ঠানের মূলমঞ্চে আয়োজন করা হয় সাবেক শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রকৌশলী ড. আব্দুল মতিন পাটোয়ারী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি ও অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, বুয়েটের যারা সাবেক শিক্ষার্থী তারা বেশিরভাগই আজ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরসহ কর্মরত আছেন দেশ বিদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের পদে। সেখানে তারা সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
দেশের জন্য লাগসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে স্থপতি ও প্রকৌশলীরা দেশের উন্নয়নের চাকাকে আরো গতিশীল করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।
বসুন্ধরা সিমেন্টের পক্ষে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন সিমেন্ট সেক্টরের জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) খন্দকার কিংশুক হোসাইন, এজিএম (টেকনিক্যাল সাপোর্ট) প্রকৌশলী সরোজ কুমার বড়ৃয়া, ব্রান্ড ম্যানেজার আশিকুর রহমান, প্রোডাক্ট এন্ড কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার ইয়াসির খান মোহাম্মদ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ প্রকৌশলী কুদরত-ই-ইলাহী প্রমুখ।
** প্রকৌশলীদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৪