ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অবৈধভাবে ভর্তির সুযোগ প্রায় বন্ধ হয়েছে।
কিন্তু, তারপরেও ‘ভুয়া শিক্ষার্থী’ বিড়ম্বনা কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের এ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে নানা ধরনের সুবিধা নিচ্ছেন বহিরাগতরা। চলছে নানা অপকর্মও। ফলে, একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অপরদিকে, বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে, সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রশাসনকেও।
সম্প্রতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষ থেকে রাতের বেলায় এক ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। জাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই ছাত্রী ঢাবির ‘ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং’ বিভাগের ছাত্রী। সে ঘটনা নিয়ে পরদিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ অনলাইন পোর্টালগুলোতে ফলাও করে সংবাদ প্রচার করা হয়।
কিন্তু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং’ নামে কোনো বিভাগই নেই। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স দুটি আলাদা বিভাগ। ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এক সঙ্গে থাকলেও গত নয় বছর ধরে ফিন্যান্স এবং ব্যাংকিং দুটি আলাদা বিভাগ হিসেবে একাডেমিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্স যুক্ত হয়ে তা ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স হয়েছে।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুজিবুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওই ছাত্রী বিজনেস ফ্যাকাল্টির কোনো একটি বিভাগের হবে! ঠিক কোন বিভাগের ছাত্রী, তা এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। ’
কীভাবে নিশ্চিত হলেন ওই ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আইডি কার্ড দেখে নিশ্চিত হয়েছি। তবে এ ব্যাপারে আরো তদন্তের জন্য ওই হলের প্রভোস্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। ’
পরিচয়পত্রের রেফারেন্স দিয়ে ওই ছাত্রীকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করলেও এ জন্য তারা ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলি রুবাইতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স দুটি আলাদা বিষয়।
‘ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং’ নামের বিষয়টি নয় বছর আগে পৃথক হয়ে গেছে। এখন ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং দুটি আলাদা বিষয়। বর্তমানে ব্যাংকিং বিভাগের সঙ্গে যু্ক্ত হয়েছে ইন্স্যুরেন্স। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে ক্যাম্পাসেও চলছে বিভিন্ন অপকর্ম। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কলা ভবনের সামনে থেকে এক ভুয়া শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
তার নাম আব্দুস সালাম। গ্রামের বাড়ি নাটোর। তিনি সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বলে জানা যায়।
ঢাবির শিক্ষার্থী না হয়েও দীর্ঘ তিন বছর ধরে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে আসছেন। কয়েক মাস আগে তিনি কবি জসিম উদ্দীন হলের ঊর্দু বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিমের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন।
মঙ্গলবার তারই মাধ্যমে একই হলের ছাত্রলীগের এক নেতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এ সময় তিনি আমিনুলের সেলফোনের নম্বর সংগ্রহ করেন।
পরবর্তীতে বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে কোনো এক মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করানোর জন্য আমিনুলকে পীড়াপীড়ি করেন। বিষয়টি আমিনুলের কাছে সন্দেহজনক মনে হলে তিনি হলের আরো কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে নিয়ে ওই ভুয়া শিক্ষার্থীকে মারধর করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের মাধ্যমে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওই ছাত্র নিজেকে ঢাবির পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে নানা অপকর্ম করে আসছিল। আমরা তাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি। ’
ভুয়া শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভুয়া শিক্ষার্থীদের কারণে শুধু শিক্ষার্থীদেরই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ’
বাইরে গিয়ে কেউ নিজেকে ঢাবি শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিলে তা বিস্তারিত যাচাই-বাছাইয়েরও পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১১১ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৪