ঢাকা: বাংলানিউজে ‘আইডিয়ালে অবৈধ ভর্তি বন্ধ (২য় পর্ব) ‘কৌশলী সিন্ডিকেট’ সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়েছে আইডিয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের।
শুক্রবার সকালে টানানো ‘ভর্তি সংক্রান্ত সকল প্রকার আলোচনা বন্ধ’ এই নোটিশটির স্থলে শনিবার সকালে ‘ভর্তি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ’ লেখা আরেকটি নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে শুত্রুবার স্কুল গভর্নিং বডি (জিবি) এর মিটিংয়ে অবৈধ ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কৌশলে ‘ভর্তি সংক্রান্ত সকল প্রকার আলোচনা বন্ধ’ শীর্ষক নোটিশ দেয়। এ নোটিশকে কৌশলে ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ফন্দি বলে মনে করছিলেন অভিভাবকরা।
এমন প্রেক্ষাপটে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ শনিবার প্রকাশ করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। এরপর শনিবারই সকাল দশটায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ‘ভর্তি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ’ লেখা নতুন আরেকটি নোটিশ টানায়।
বিষয়টি জানতে শনিবার অধ্যক্ষ ড. শাহানআরা বেগমকে কয়েকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায় নি।
তবে এর আগের দিন শুক্রবার তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, ভর্তি সংক্রান্ত সব আলোচনা বন্ধ। এ নিয়ে আর কোনো তদবির চলবে না।
এ সময় সন্তানদের ভর্তি করাতে টাকা দিয়েছেন এ রকম কয়েকশ’ অভিভাবককে স্কুলের সামনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিভাবকরা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় জিবি সদস্য (অভিভাবক) সোহেল আহমেদ লাল পাঞ্জাবি পরে স্কুলে গেলে অভিভাবকরা তাকে ঘিরে ধরেন। এ সময় চলতি মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে আপনাদের সন্তানদের ভর্তি করানো হবে বলে আশ্বস্ত করে ছাড়া পান তিনি।
একই সময় জিবি’র আরেক সদস্য (শিক্ষক) ও একটি রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা অধ্যাপক আমজাদ হোসেন অভিভাবকদের জানান, দলীয়ভাবে এটি সমাধান করা হবে। তিনি দলবল নিয়ে রাশেদ খান মেননকে ম্যানেজ করবেন বলেও জানান।
অভিভাবক সূত্র জানায়, অন্য আরেকজন অবৈধ ভর্তির সিন্ডিকেট সদস্য অভিভাবকদের এ বলে আশ্বস্ত করেন, ৩১ তারিখের মধ্যে ডিসেম্বর মাসের ভর্তি দেখিয়ে মুগদাপাড়া শাখায় ৪০০ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে মূল শাখায় তাদের বদলি করে আনা হবে।
ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি অভিভাবকদের বোঝান, এবার একটু ঝামেলা হয়েছে,সাংবাদিকরা জেনে গেছে। তাই কিছু করার নেই। ভর্তি হওয়ার একমাসের মধ্যে সবাইকে মূল শাখায় নিয়ে আসা হবে বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন তিনি।
এছাড়াও যে কোনো মূল্যে গর্ভনিং বডির (জিবি) অধিকাংশ সদস্য সভাপতি রাশেদ খান মেননকে বাগে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে সূত্র বলছে।
অন্যদিকে দুপুর সাড়ে ১২টায় আহসান উল্লাহ মানিক (জিবি) অভিভাবক সদস্য বনশ্রী শাখার ইংরেজি ভার্সনের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে অনেক সময় ধরে মতবিনিয়ম করেন।
এছাড়া ভর্তির উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় সব শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষককে নিয়ে মিটিংয়ে বসেন অধ্যক্ষ। দুপুর ১২টায় জিবি রুমে আনুষ্ঠানিক এক মিটিং করেন গর্ভনিং বডির সদস্য। সেখানে অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত বলে জানায় সূত্র।
অধ্যক্ষের অফিস সূত্র বলছে, অবৈধ ভর্তি সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখনো রাশেদ খান মেননকে ম্যানেজ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন স্কুলের বাংলার শিক্ষক আব্দুর রশিদ, আব্দুল সালাম খান, তার ভাই ইঞ্জিনিয়ার আতিক, গভর্নিং বডির (জিবি) সদস্য খন্দকার মোসতাক, আহসান উল্লাহ মানিক, আমজাদ হোসেন এবং মতিঝিল থানার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের তিন নেতা।
এর আগে গত সপ্তাহে আর কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না বলে বৃহস্পতিবার স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, অবৈধ ভর্তি নিয়ে অন্তত ৪০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে অভিভাবকদের কাছ থেকে। এজন্য জিবি সভাপতি রাশেদ খান মেনন অবৈধ ভর্তি নাকচ করে দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা কমেনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালেই দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ‘আইডিয়ালে অবৈধ ভর্তির রমরমা বাণিজ্য’ ও বৃহস্পতিবার ‘বাংলানিউজের খবরে অবৈধ ভর্তি বন্ধ আইডিয়ালে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দু’টি প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। বন্ধ হয় অবৈধ ভর্তির কার্যক্রম।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪১ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৪
** আইডিয়ালে রমরমা অবৈধ ভর্তিবাণিজ্য!
** বাংলানিউজের খবরে অবৈধ ভর্তি বন্ধ আইডিয়ালে