ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

আলাদা মাদরাসা অধিদপ্তর হচ্ছে

নুর মোহামম্মদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৪
আলাদা মাদরাসা অধিদপ্তর হচ্ছে

ঢাকা: শিক্ষা অধিদপ্তরের দুর্নীতি, অনিয়ম ও কাজের গতি বাড়াতে আলাদা মাদরাসা অধিদপ্তর হচ্ছে। শিগগিরই এর আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হচ্ছে।

এজন্য ৫০টি আলাদা পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও অবকাঠামোর কাজ।
 
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৮ হাজার মাদরাসা শিক্ষার কার্যত্রুম পরিচালিত হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউসির) অধীনে। মাদরাসা শাখায় দুর্নীতি ও অনিয়ম বেশি হওয়ায় এটিকে আলাদা করার দাবি ছিল অনেক পুরনো।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মাদরাসা শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের জন্য প্রায় সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও অনুমোদন পাওয়া গেছে। নতুন এ অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেশের ১৭ হাজার ৯০৭টি মাদরাসা পরিচালিত হবে।
 
মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, মাদরাসা শিক্ষকদের আন্দোলনে মুখে ২০১১ সালে আলাদা অধিদপ্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু অর্থমন্ত্রণালয় অর্থ না দেওয়ায় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কিছু লোকের গাফিলতির কারণে দীর্ঘদিন তা আটকে থাকে। শেষ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী স্ব-উদ্যোগে এটির প্রক্রিয়া এগিয়ে নেন। এখন যে কোন সময় এটির আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করা হবে বলে সূত্র উল্লেখ করছে।  
 
বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে জানান, মাদরাসা শিক্ষার প্রতি সরকারের আলাদা নজর ছিল শুরু থেকে। এজন্য আমারা আরবী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি।
 
তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষায় গতি বাড়ানোর জন্য আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। আমরা সে দাবিটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এ নিয়ে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্তও হয়েছে। এ জন্য আলাদা অফিস, জনবল নিয়োগেও প্রক্রিয়া চলছে।  
 
মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানান, এটি আটকে থাকার মূল কারণ ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন না হওয়া। গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় এটি অনুমোদন দিয়েছে। তাই এখন এটি কাজ শুরু করতে বেশি সময় লাগবে না।
 
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রাথমিকভাবে এর অফিস গাজীপুরে হওয়ার কথা থাকলেও ব্যয় সংকোচন করতে অফিস রাখা হচ্ছে শিক্ষা ভবনটির ৫ম তলায়। এজন্য অধিদপ্তর পরিচালনার জন্য আলাদা ৫০টি পদও তৈরি করা হয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে আলাদা মহাপরিচালক।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেতে চলছে লবিং-তদবির। সরকারের উচ্চ পদস্থ লোকদের কছে চলছে নিয়োগ পাওয়ার সর্বোচ্চ তদরিব।
 
যে সব পদ সৃষ্টি হয়েছে
মাদরাসা অধিদপ্তরের জন্য যেসব পদ সৃষ্টি করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে একজন মহাপরিচালক রয়েছেন। এছাড়া রয়েছে পরিচালক ২ জন, উপ-পরিচালক ৩ জন, সহকারী পরিচালক ৭ জন, পরিদর্শক ৭ জন, সহকারী প্রোগ্রামার ১ জন, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ১ জন, লাইব্রেরিয়ান ১ জন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ১ জন, ব্যক্তিগত সহকারী ৩ জন, স্টোরকিপার ১ জন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ২ জন, ক্যাশিয়ার ১ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ১ জন, হিসাব সহকারী ১ জন, ড্রাইভার ৪ জন, ডেসপাস রাইডার ১ জন, এমএলএসএস ৭ জন, গার্ড/নাইট গার্ড ৩ জন ও ঝাড়ুদার ২ জন।
 
দেশে বর্তমানে ১৭ হাজার ৯০৭টি মাদরাসা রয়েছে। এরমধ্যে এবতেদায়ী ৬ হাজার ৮৪৮টি, দাখিল ৬ হাজার ৫৬৬টি, আলিম ২ হাজার ৭৮২টি, ফাজিল ১ হাজার ৪৯২টি ও কামিল ২১৯টি। এরমধ্যে এমপিওভুক্ত মাদরাসার সংখ্যা ৯ হাজার ১১৬টি। এরমধ্যে মহিলা মাদরাসার সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৬টি। সবমিলিয়ে বর্তমানে মাদরাসায় পড়ালেখা করছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৪৪৭ জন শিক্ষার্থী।
 
মাউশির অধীনে মাদরাসা শিক্ষা পরিচালিত হওয়ায় সাধারণ ও মাদরাসা দু’টোতেই জট সৃষ্টি হয়। এছাড়া মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি হচ্ছে স্বতন্ত্র অধিদপ্তর। এছাড়া শিক্ষা ভবনের দুর্নীতি আর অনিয়মের ঘটনা অনেক পুরনো। বিশেষ করে মাদরাসা শাখায় আরও বেশি। স্বতন্ত্র অধিদপ্তর হলে মাদরাসা শিক্ষাকে কিছুটা দুর্নীতিমুক্ত  রাখা যাবে বলেও মত দেন অনেকেই।
 
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা হলে মাদরাসা শিক্ষায় অনেক গতি আসবে। তাদের যেতে হবে না মাউশির কর্মকর্তাদের কাছে।
 
সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাসেম মিয়া।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আলাদা মাদরাসা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। এটি হলে আমাদের কাজের গতি আসবে। শিক্ষা মান বাড়ানো জন্য আলাদাভাবে কাজ করার সুযোগ পাবো।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।