ঢাকা: পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরাও। বিগত কয়েক বছর শিক্ষাখাত ভালো করলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ম্লান হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষার গৌরব।
জড়িতরা শাস্তির আওতায় না আসায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা বাড়ছে, বলছেন শিক্ষাবিদরা।
বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক সমাপনী, অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি, মাধ্যমিকে এসএসসি এবং উচ্চ মাধ্যমিকে এইচএসসির পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। দিন দিন তা বাড়ছেও। সর্বশেষ, এইচএসসিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এইচএসসিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এর আগে বুধবার বিভিন্ন স্থানে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। রাজধানীর বিভিন্ন ফটোকপির দোকানে প্রশ্নপত্র বিক্রি হয়। প্রযুক্তির কল্যাণে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাধ্য হয়েই শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা স্থগিত করে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেন, কিছু তথ্যের ভিত্তিতে আমরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, তাতে পরীক্ষা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না বলে মনে করে পরীক্ষা স্থগিত করি।
এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশের ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থী ২ হাজার ৩৫২টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ঢাকা বোর্ডে এই সংখ্যা সব চেয়ে বেশি, যা ৩ লাখ ৩৮ জন।
প্রশ্ন ফাঁস এবং পরে পরীক্ষা স্থগিতের ঘটনায় উৎকণ্ঠিত শিক্ষার্থীরা। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রওশন জামিল বাংলানিউজকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁস হলে পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং ফলাফলেও প্রভাব পড়বে।
গত ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষার প্রথম দিন অনুষ্ঠিত ইংরেজি প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে প্রথম দিন শেরপুর ও চট্টগ্রামে কয়েক জনকে আটকও করা হয়।
শিক্ষার্থীদের পাপশাপাশি উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। মিরপুরের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক আরিফুর রহমান বলেন, সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হলেও প্রশ্নফাঁসে সত্যিকারের মেধাবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর আগে গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। সে সময় শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ জানিয়েছিলেন, ইংরেজিতে ৮০ শতাংশ এবং বাংলায় ৫০ শতাংশ প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়া গেছে। তবে ওই পরীক্ষা বাতিল করা হয়নি, শাস্তিও নেওয়া হয়নি কারো বিরুদ্ধে।
ওই সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৯ লাখ ৫০ হাজার ১৯৩ জন শিক্ষার্থী।
এরও আগে ডিসেম্বর প্রকাশিত জেএসসি-জেডিসির ফলের পর প্রশ্ন ওঠে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণেই আগের বছরের তুলনায় এবার পাস এবং জিপিএ-৫ বেড়েছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ঐচ্ছিক বিষয়ের নম্বর যোগে জিপিএ-৫ বেড়েছে।
নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ২০১৩ সালের জেএসসি-জেডিসিতে অংশ নিয়েছিল ১৯ লাখ ১ হাজার ৯৮১ জন। ২০১২ সালে জিপিএ-৫ ছিল ৪৬ হাজার ৯৪২ জন, ২০১৩ সালে তা বেড়েছে সাড়ে তিনগুণেরও বেশি। এই সংখ্যা ১ লাখ ৭২ হাজার ২০৮ জন।
পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের কেলেঙ্কারিতে বিব্রত শিক্ষাবিদরাও।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরীর মতে, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
প্রশাসনের যেখানেই হোক, গাফিলাতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে যত দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা যাবে ততই দ্রত উদ্বেগ কমবে বলে বাংলানিউজকে জানান তত্ত্বাধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।
আর প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা দুর্নীতির আওতায় পড়ে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষাখাতে যখন অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে, তখন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা উদ্বেগজনক। এই দুর্নীতির সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বোর্ডের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এই কমিটি প্রম্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্ত ছাড়াও বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তার বিষয়ে সুপারিশ দেবে।
বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
** ঢাকা বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা ৮ জুন
** মিলল ইংরেজির প্রশ্নপত্র
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৪