ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বইয়ের বেশি দাম নেওয়া, নিম্ন মানের বই সরবরাহ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে নীলক্ষেতের বই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি করে সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের বুকলিস্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বই কিনতে গেলে দোকানীরা বেশি দাম হাকে। অনেক ক্ষেত্রে মূল দামের কয়েকগুণ বেশি দামে বই বিক্রি করেন। কিন্তু বেশি দাম দিয়ে বই কিনেও অনেক সময় প্রতারিত হন শিক্ষার্থীরা।
কারণ বইগুলো ‘পাইরেটেড’ হওয়ায় তার ছাপার মান থাকে অত্যন্ত নিম্ন মানের। অনেক বইয়ের বিভিন্ন পৃষ্ঠাও থাকে না।
তাৎক্ষনিকভাবে এসব বইয়ের ত্রুটি ধরা না পড়লেও পরবর্তীতে যখন ধরা পরে তখন ওই নির্দিষ্ট বইগুলো পরিবর্তন বা দাম ফেরত না দিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তারা। প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের হাতে নাজেহাল হতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদের।
গত ১২ এপ্রিল এমনই এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫ জন ছাত্র আহত হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী।
আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে দেওয়া হয়।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে প্রক্টর জানান, ১২ এপ্রিল বিকেলে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এক ছাত্রের সঙ্গে এক ব্যবসায়ীর বইয়ের দাম নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ওই ব্যবসায়ী ছাত্রকে ধাক্কা দেন।
এরপর হলে ফিরে বিক্ষুব্ধ ওই ছাত্র তার ২০/৩০ জন বন্ধুকে নিয়ে নীলক্ষেতের দিকে যেতে চাইলে ব্যবসায়ীরা তাদের ধাওয়া দেন।
এরপর ফের বিকাল পৌনে ছয়টার দিকে শতাধিক ছাত্র হল থেকে লাঠিসোঁটা, রড ও হকিস্টিকসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে নীলক্ষেতের দিকে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংষর্ষ বাঁধে।
জানা যায়, এরপর নিউমার্কেট থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আলোচনা করতে চাইলেও তাদের কথা রাখেনি ব্যবসায়ীরা। এসময় তারা পুলিশকে উপেক্ষা করেই তারা ছাত্রদের ধাওয়া দেয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশের রাবার বুলেট ও পরষ্পরের ইট-পাটকেলে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন ব্যবসায়ী আহত হন বলে জানা যায়।
এসময় ফুটপাতে থাকা বিভিন্ন ফল ও মোবাইল এক্সেসরিজের দোকানেও আগুন এবং ভাঙচুর চালানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক ছাত্র বাংলানিউজকে বলেন,পুলিশ প্রথমে ঘটনার মীমাংসা করতেই এসেছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাদের উপেক্ষা করেই ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। পরে শিক্ষার্থীরাও হামলা চালালে দু-পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বিদ্যমান কপিরাইট আইন অনুযায়ী কোনো কর্মের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ বা বইয়ের সর্বোচ্চ ১৫ পৃ্ষ্ঠা ফটোকপি করা যায়। শিক্ষকদের জন্য পুরো বই একসেট এবং দুষ্প্রাপ্য বইয়ের ক্ষেত্রে কোনো লাইব্রেরিতে সংরক্ষনের জন্য সর্বোচ্চ তিনসেট ফটোকপি করা যাবে।
কিন্তু নীলক্ষেতের দোকানিরা এসব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বইয়ের লেখক ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কোনো প্রকার রয়ালটি না দিয়েই হাজার হাজার বই ফটোকপি করে বিক্রি করছেন।
অন্যদিকে একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, অ্যাসাইনমেন্ট, থিসিস পেপারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ ডুকুমেন্ট তৈরির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালসহ আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মূলত নীলক্ষেতের কম্পিউটার এবং ফটোকপির দোকানগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নিয়ে থাকে। পেনড্রাইভ, মেমোরি কার্ডসহ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দামী ডিভাইস নাই করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নীলক্ষেত বই ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু জাফর মিয়া।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘এক হাতে তালি বাজেনা। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩০ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৪