ঢাকা: প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতামূলক গবেষণার তাগিদ বাড়তে হবে। তা না হলে, দেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, দেশের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে গবেষণা খাতে উন্নতি না করলে দেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতি এক সময় থেমে যাবে। পাটসহ বেশ কয়েকটি শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশেই রয়েছে।
‘ইনোভেশন ইকোসিস্টেম ফর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট: ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রি কলাবোরেশন’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উচ্চশিক্ষা মান্নোনয়ন প্রকল্প (হেকেপ)।
হেকেপ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নোয়নের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধীনে বাস্তবায়িত এটি একটি প্রকল্প।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব গবেষণা অ্যালায়েন্সের সভাপতি ড. আর এ মাশেলকার। এতে
সভাপতিত্ব করেন প্রকল্পের পরিচালক কানিজ ফাতেমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা আমাদের লক্ষ্য। এটা বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নও বটে। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে হবে। সরকার সেই লক্ষ্যেই এগুচ্ছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. একে আজাদ চৌধুরী বলেন, বিশ্বে এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি কদর প্রায়োগিক আবেদনসমৃদ্ধ গবেষণার। আবার ভোক্তার প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের গবেষণা প্রয়োজন তা নির্ধারণের দায়িত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠানের।
তিনি উন্নত দেশের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, আমাদের দেশে এখনও ‘ফরোয়ার্ড লিংকেজের (অগ্রগামী সংযুক্তি) উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোয় উদ্যোগের অভাব রয়েছে। এই অভাব পূরণের জন্যই ইউজিসি কাজ করছে।
শিক্ষাসচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, কোনো শিল্প-প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তার উৎপাদিত পণ্যের মানোন্নয়ন, আগামী দিনের চাহিদা অনুযায়ী নতুন পণ্য উদ্ভাবন এবং উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য গবেষণা চালিয়ে যেতে হয়। সরকার সেই জায়গাটিই তৈরি করে দিতে চায়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রয়েছেন বিজ্ঞ-পরিপক্ব গবেষক এবং তরুণ শিক্ষার্থী। আগামী দিনের চাহিদা সম্পর্কে তরুণদেরই রয়েছে সঠিক ধারণা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রয়েছে গবেষণাগার। অন্যদিকে শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোয় রয়েছে বর্তমান বাজারের চাহিদা, উত্পাদনের মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা এবং উত্পাদন প্রক্রিয়ার সমস্যা সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। অনেক শিল্প-প্রতিষ্ঠানে গবেষণা সহায়ক আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে।
সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় গবেষণার মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভজনক জ্ঞান সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। এ আর্থিক লাভের অংশ জনগণও সরাসরি পেতে পারে। যেমন গবেষণার মাধ্যমে একটি ওষুধের উত্পাদন খরচ কমানো সম্ভব হলে কম মূল্যে সেটি বাজারে পাওয়া যাবে।
হেকেপ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার জন্য সহায়ক সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ১৯৬টি উপ-প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্পের মেয়াদ একদফা বৃদ্ধিসহ এতে অতিরিক্ত আরো ১২৫ মিলিয়ন ডলার বাজেট বেড়েছে।
এ অতিরিক্ত অর্থ থেকেই একাডেমিক উদ্ভাবনী ফান্ডের তৃতীয় রাউন্ডের জন্য ২৪০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যৌথ গবেষণা খাতে ৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৩