জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রধান ফটকের সামনে নেই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। দুই লেনে দুটি স্পিড ব্রেকার থাকলেও গাড়ির চাপে তা প্রায় রাস্তার সঙ্গে মিশে গেছে।
এর ফলে দ্রুতগতিতে ছুটে আসা গাড়িগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গতি না কমিয়েই দ্রুত চলে যাচ্ছে। আর এর নিচে চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা।
প্রতিনিয়ত প্রধান ফটকের সামনে দুর্ঘটনা ঘটলেও আগের প্রশাসন কার্যকরী কোনো প্রদক্ষেপ নেয়নি। বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদেরও এ সংক্রান্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটার পরেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়াকে প্রশাসনের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাবি’র মূল ফটকের অপর পাশে পিকআপ ভ্যানের চাপায় নিহত হন নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার। এ সময় আহত হন আরও দুই পথচারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দ্রুতগতিতে যাওয়া পিকআপ ভ্যানটি কেয়া পরিবহন নামে অপর একটি দূরপাল্লার বাসকে সাইড দিতে গিয়ে লেন পরিবর্তন করে অন্য লেনে চলে যায়। এ সময় পিকআপ ভ্যানটির গতি বেশি থাকায় চালক এর নিয়ন্ত্রণের না রাখতে পেরে পাশেই বাসের জন্য অপেক্ষমাণ ফাতেমাসহ অন্যান্য যাত্রীদের চাপা দেয়।
এতে ফাতেমা গুরুতর আহত হন। পরে তাকে দ্রুত সাভারের সুপার ক্লিনিকে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রেহেনা আক্তার ও নুরুল ইসলাম নামে দু’ব্যক্তিও আহত হন।
এদিকে, ঘটনার পর পরই খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তারা পুলিশ ভ্যানসহ ২০/২৫টি যানবাহন ভাঙচুর করেন এবং চারটিতে আগুন ধরিয়ে দেন।
দুর্ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা পিকআপ ভ্যানটির দ্রুতগতিকেই দায়ী করেছেন। সে কারণে এ রুটে চলাচলকারী সব যানবাহনের জন্য নির্দিষ্ট গতি ঠিক করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে প্রধান ফটকের সামনে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করারও দাবি জানান তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নামমাত্র স্টপেজ থাকলেও কোনো বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থামে না বললেই চলে। ফলে, শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বাস থামানোর চেষ্টা করেন।
প্রধান ফটকসহ কোনো ফটকের সামনে যথাযথ স্পিড ব্রেকার নেই। নামমাত্র দুই-একটি স্পিড ব্রেকার থাকলেও তা প্রায় রাস্তার সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে, প্রতিনিয়ত প্রধান ফটকের সামনে ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রশাসন এসব বিষয়ে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
দুর্ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নিতে বললে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে ৫টি দাবি পেশ করেন।
দাবিগুলো হলো- নিহতের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া, মীর মশাররফ হোসেন সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে বিশমাইল গেট পর্যন্ত স্পিড ব্রেকার স্থাপন, প্রধান ফটকের সামনে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের ব্যবস্থা, দূরপাল্লার গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট গতি ঠিক করে দেওয়া, লোকাল বাসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থামার ব্যবস্থা ও প্রান্তিক গেটে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করা।
এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাতেমার নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করেছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দফতর সম্পাদক সাফাত পারভেজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ঘটনার দায়ভার শুধু আনফিট যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদেরই নয়, এর দায়ভার অনেকাংশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপরও বর্তায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাচলকারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য চলাচলকারী যানবাহন মালিক সমিতির সঙ্গে কার্যকরী সংলাপ করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। ফলে, বাসের জন্য অপেক্ষমান শিক্ষার্থী ফাতেমাকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট দ্রুত পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সেন্টার নির্মাণ, নিয়মিত ও ছুটিকালীন বাস ও ট্রিপ বৃদ্ধি, পরিবহন মালিকের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বিশমাইল-প্রান্তিক, প্রধান ফটক ও মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন গেটে শিক্ষার্থীদের জন্য স্টপেজ, স্পিড ব্রেকার নির্মাণ ও নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৪