ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দিনমজুরি করে শিউলীর জিপিএ-৫

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৪
দিনমজুরি করে শিউলীর জিপিএ-৫ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালমনিরহাট: দিনমজুর বাবা অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে থাকায় মায়ের সঙ্গে ক্ষেতে-খামারে কাজ করতে হয় শিউলীকে। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার।



অর্থের সংকুলান না হওয়ায় স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষাও দেওয়া হয়নি। পরে নিজের দিনমজুরির জমানো সামান্য টাকা ও স্থানীয়দের সহায়তায় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এসএসসি) ফরম পূরণ করে সে। এতো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মেধা আর অদম্য মনোবলের জোরে শিউলী এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে।

ফারজানা আক্তার শিউলী লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগিমারী ইউনিয়নের ধুবনী গ্রামের দিনমুজর দম্পতি ফজলুল হক-নবিরন নেছার মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে শিউলী ছোট। এ বছর শিউলী স্থানীয় গডিমারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক শাখায় এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে।

শিউলীর স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শেষে ব্যারিস্টার হবে সে। তার এ স্বপ্ন ছেড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতো হলেও শিউলী তার লক্ষ্যে অবিচল।

সে বাংলানিউজেকে জানায়, চা বিক্রেতা থেকে নরেদ্র মোদী যদি ভারতের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তাহলে দিনমজুরের মেয়ে হয়ে সে কেন ব্যারিস্টার হতে পারবে না?

শিউলী আরো জানায়, তার বাবা-মা দু’জনই দিনমজুরের কাজ করতেন। বছর খানেক আগে তার বাবা অসুস্থ হয়ে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এরপর থেকে মায়ের সামান্য আয় দিয়েই অনাহারে-অর্ধাহারে সংসার চললেও বন্ধ হয়ে যায় তার লেখাপড়া। পরিবারের সমস্যায় সেও পরে মায়ের সঙ্গে ক্ষেতে-খামারে কাজ শুরু করে। টাকার অভাবে নির্বাচনী পরীক্ষাও দেওয়া হয়নি তার।

সেই কষ্ট থেকেই মায়ের সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করে কিছু টাকা জমা করে শিউলী। পরে ওই টাকা ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় এসএসসির ফরম পূরণ করে সে। তবে দিনের বেলায় দিনমজুরির জন্য পড়াশোনার সময় না পাওয়ায় রাত জেগে পড়াশোনা করেছে সে।

আবেগাপ্লুত শিউলী জানায়, জিপিএ-৫ পেয়ে তার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। ভালো ফলাফল করে সবাই আনন্দে মিষ্টি খায়। কিন্তু তাদের সে সামর্থ্য নেই। তাছাড়া বছরের দুই ঈদ ছাড়া তাদের মাংস খাওয়ার সৌভাগ্য হয় না বলে পরীক্ষার ফলাফল জানার পর বাবা-মাকে নিয়ে মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে আনন্দ করেছে সে।

এসএসসি পাশের পর এখন তার লক্ষ্য ভালো কোনো কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া। তাই ভর্তির জন্য খরচ জোগাতে ক্ষেতে-খামারে দিনমজুরি করে কিছু টাকা জমাচ্ছে শিউলী।

শিউলীর মা নবিরন নেছা বলেন, ‘জজ-বেরিস্টার হতে কত টাহা লাগে বাহে? শিউলী বেরিস্টার হবার চায়। কোনঠে পাম এত টাহা। ’ 

গডিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জানান, শিউলী মেধাবী ও জেদী মেয়ে। লেখাপড়ার প্রতি রয়েছে তার প্রচণ্ড আগ্রহ। সহযোগিতা পেলে শিউলী তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

এ রকম হাজারো শিউলী রয়েছে বাংলাদেশে। একটুখানি যত্ন আর সাহায্য না পেয়ে মাঝ-পথেই যাদের সম্ভাবনার মৃত্যু হয়। অথচ এই শিউলীদের হ‍াতেই বিনির্মাণ হবে আগামীর বাংলাদেশের।

সমাজের দুঃস্থ ও আর্তপীড়িত মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে বাংলানিউজের নিজস্ব ত্বত্তাবধানে পরিচালিত হচ্ছে ‘বাংলানিউজ সোশ্যাল সাভির্স’ (বিএনএসএস) সামাজিক সেবা কর্মসূচি।

শিউলীর ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে তাকে বাংলানিউজের মাধ্যমে সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন, বিএনএসএস আহ্বায়ক শারমীনা ইসলাম, ফোন: ০১৯৩৭১৯৯৩৭৬। ‌ইমেল: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।