ঢাকা: পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের উৎস খুঁজে পাওয়ার বিষয়টিকে ‘কঠিন কাজ’ হিসেবে দেখছে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। নিখুঁত তদন্তের জন্য আরো সময় চাইবেন তারা।
এইচএসসি’র ইংরেজী দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসেন সোমবার বাংলানিউজের কাছে এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রশ্ন ফাঁসের কারণে গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এই ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসেনকে প্রধান করে একটি ‘উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন’ তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই কমিটিকে সমস্ত পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধে করণীয় নির্ধারণের সুপারিশ করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বর্তমানে জেএসসি-জেডিসি, এসএসসি এবং এইসএসসির মত পাবলিক পরীক্ষায় লাখ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। কিন্তু এবার জেএসসি পরীক্ষাতেও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটিটে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এখনও প্রশ্নপত্র ফাঁস করার উৎসস্থল বের করা যায়নি। তবে কমিটি বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
সোমবার সচিবালয়ে তিন পার্বত্য জেলার মাধ্যমিক শিক্ষার পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদগুলোর কাছে হস্তান্তরের চুক্তি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
রোববার অনুষ্ঠিত গণিত প্রথমপত্রের পরীক্ষার আগে ফেইসবুকের ‘প্রশ্নবাজার’ নামের একটি পেইজে পাওয়া নমুনা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নের অধিকাংশই মিলে যায়।
এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গণিতের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ পরীক্ষার দিন সকাল ৬টার আগে প্রশ্ন ছাপাই হয়নি।
এর আগেও কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে।
“পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কথাও বলা হয়েছিলো, কিন্তু দেখা গেছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে মাত্র তিনটি প্রশ্ন মিলেছে। ”
রসায়ন বিষয়ের প্রশ্নও ছাপা হয়েছে কয়েক ঘণ্টা আগে, প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার সুযোগ নেই, জানান শিক্ষামন্ত্রী।
ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার খবর আমরা নিজেরাই বের করেছি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
“আমরা আশা করি প্রশ্ন ফাঁসের উৎস খুঁজে বের করতে পারবো,” বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
নাহিদ দাবি করে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুনাম নষ্ট এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্যই এসব হচ্ছে। অনেকে অনুমান করে প্রশ্ন ফাঁসের কথা বলছেন।
‘ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কিছু লোক এসব প্রচারণার পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন’ দাবি করে মন্ত্রী বলেন, যারা প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য দিচ্ছেন দয়া করে তাদের ধরিয়ে দিন।
তবে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার প্রচারণার উৎস সন্ধান করতে পারবো, বলে আশা করেন শিক্ষামন্ত্রী।
এদিকে ঢাকা বোর্ডের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে।
তবে প্রতিবেদনে কী আছে বা কী সুপারিশ করা হয়েছে তা এখনই প্রকাশ করতে নারাজ শিক্ষাবোর্ড।
বোর্ড চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম সোমবার বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন জমার পরই এ সংক্রান্ত ফাইল খোলা হবে। তা না হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তকাজ প্রভাবিত হতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসেন বলেন, সমস্ত পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস এড়াতে পরীক্ষার দিন প্রশ্ন ছাপানো এবং একই দিনে দুটি পরীক্ষা গ্রহণের সুপারিশ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৪