সিলেট: প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে সিলেট বিভাগের ৪৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। প্রধান শিক্ষক বিহীন এসব বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের হাল ধরেছেন সহকারী শিক্ষকরা।
এছাড়া রয়েছে সহকারী শিক্ষকেরও সংকট। বিভাগের চার জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১ হাজার ৩৪টি সহকারী শিক্ষকের পদও রয়েছে শূন্য।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- এ বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিভাগের চারটি জেলায় ৪৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শূন্য পদ রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। এ জেলার ১৪১টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য। এছাড়া সিলেট জেলার ১৩৬টি বিদ্যালয়ে, মৌলভীবাজার জেলার ৭৪টি এবং হবিগঞ্জ জেলার ৭৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই।
অন্যদিকে চার জেলায় ১ হাজার ৩৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শূন্য পদ রয়েছে সিলেট জেলায়। এ জেলায় ৪০৪টি সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য আছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলায় ২৭৩টি, মৌলভীবাজার জেলায় ১৬৯টি এবং হবিগঞ্জ জেলার ১৮৮টি পদ শূন্য রয়েছে।
অবসর ও বদলি সংক্রান্ত কারণে দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য হওয়া এসব পদে নতুন করে নিয়োগ না হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান দিন দিন হয়ে পড়ছে নিম্নমূখী। এতে করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রমে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সিলেট জেলা শাখার সভাপতি ওয়েছ আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন- বিপুল সংখ্যক প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানের লক্ষ্যে এসব শূন্য আসনে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্ঠি আকর্ষণ করেন তিনি।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়- এপ্রিল মাস পর্যন্ত জেলার ১১টি উপজেলার ১৩৬টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলার ৩টি বিদ্যালয়ে, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৩টি, বালাগঞ্জ উপজেলায় ৩২টি, বিশ্বনাথ উপজেলায় ১৩টি, জৈন্তাপুর উপজেলায় ৪টি, কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ২টি, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ১২টি, কানাইঘাট উপজেলায় ৮টি, জকিগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি এবং বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১১টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য নেই।
এছাড়া ৪০৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর নিজ এলাকা বিয়ানীবাজার উপজেলায় সর্বাধিক ১১১টি, সিলেট সদর উপজেলার ৩৩টি, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ১১টি, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ১৭টি, বালাগঞ্জ উপজেলায় ৩২টি, বিশ্বনাথ উপজেলায় ২৮টি, জৈন্তাপুর উপজেলায় ২১টি, কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ১৪টি, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ২৩টি, কানাইঘাট উপজেলায় ১৭টি, জকিগঞ্জ উপজেলায় ৫৬টি এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৪১টি পদ শুন্য রয়েছে।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তা হযরত আলী বাংলানিউজকে জানান- বদলি প্রবণতার কারণে বেশিরভাগ পদ শূন্য হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাহমিনা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন- নিয়োগ সবসময়ই হয়। কিন্তু অন্য অঞ্চল বা দূরবর্তী কোন জেলা থেকে নিয়োগ পাওয়ার পর তাদের বদলি নিয়ে চলে যাওয়ার কারণে এমন সংকট দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় লোকদের নিয়োগ দিতে পারলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সিলেট অঞ্চলের নতুন শিক্ষকদের পড়ানোর পদ্ধতিতে ঘাটতি এবং তাদের যোগ্যতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন- যেভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হবে এ বিষয়ে অজ্ঞ এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষক। তাদের যোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ফলে তারা আগের চেয়ে অনেক ভালো করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৪