ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘সহায়ক’ নামে বাজারে নিষিদ্ধঘোষিত নোট-গাইড

ইমরান আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৪
‘সহায়ক’ নামে বাজারে নিষিদ্ধঘোষিত নোট-গাইড ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: মূল পাঠ্যবই পড়েই শিক্ষার্থীরা যাতে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারে এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতও এ নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রায় দিয়েছেন।



তা সত্ত্বেও ‘সহায়ক’ বইয়ের নাম করে সারাদেশে কিছু প্রকাশনী সংস্থা প্রকাশ্যে বিক্রি করছে নোট ও গাইড বই।

সরেজমিনে বাংলাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীর্ষ প্রকাশনা সংস্থা লেকচার পাবলিকেশন্স, পাঞ্জেরী, জুপিটার, অনুপম, গ্যালাক্সিসহ বাংলাবাজারের ৯০টিরও বেশি প্রকাশনা সংস্থা অবাধে প্রকাশনা ও বিক্রি করে চলছে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। সৃজনশীল ও অনুশীলন বইয়ের নাম করে তা বাজারজাত করা হচ্ছে সারা দেশে।

জানা যায়, নোট বই প্রকাশনা নিষিদ্ধ করে ১৯৮০ সালে একটি আইন করা হয়। এরপর ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অননুমোদিত বই, নোট ও গাইড বই বাজারজাত বন্ধ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

এ নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রয় সমিতির সভাপতি আবু তাহের। আবেদনে তিনি দাবি করেন- ‘নোট বই নয়, গাইড বই প্রকাশ করে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। ’

ওই বছরের ১৩ মার্চ হাইকোর্ট ১৯৮০ সালের আইনের আওতায় নোট বইয়ের সঙ্গে গাইড বই বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে।

এরপর ২০০৯ সালের নভেম্বরে নোট-গাইড বই নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তৎকালীন পুস্তক সমিতির  সভাপতি আবু তাহের।

আপিল বিভাগে বিষয়টির ওপর শুনানি শেষে ওই বছরের নভেম্বরেই আপিল খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। ফলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোট-গাইড মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রি ও বিতরণ করা পুরোপুরি অবৈধ হয়ে যায়।

ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতি আয়ত্ত করতে শিক্ষকদের ছয় মাস প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হলেও দেওয়া হচ্ছে মাত্র তিন দিন। এ কারণে ক্লাসে লেকচারসহ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নে শিক্ষকরা নোট-গাইডের সাহায্য নিচ্ছেন ।

এদিকে শিক্ষা আইন-২০১৩ এ নোট-গাইড নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রবল আপত্তি রয়েছে প্রকাশকদের।

খসড়া শিক্ষা আইন-২০১৩ এর প্রথম অধ্যায়ের ৭ ধারার ৩ উপধারায় ও তৃতীয় অধ্যায়ের ২২ ধারার ৫ উপধারায় যথাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও বোর্ডের অনুমতি ছাড়া এই শিক্ষাক্রমের অতিরিক্ত কোনো বিষয় বা পুস্তক অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না বলেও বলা হয়।

পঞ্চম অধ্যায়ের ৫১ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘গাইড বই, নোট বই তৈরি এবং সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। ’

আইনটি বাস্তবায়ন হলে তা চ্যালেঞ্জ করে আইনি লড়াইয়ের কথাও জানিয়েছেন পুস্তক সমিতির নেতারা।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন বলেন, আইনটি বাস্তবায়ন হলে প্রকাশনা শিল্পের পাশাপাশি মুদ্রণ, বাঁধাই ও কাগজ শিল্পের সঙ্গে  জড়িত ২৫ লাখ মানুষ বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

তাই খসড়া আইনটি সংশোধন করে বেসরকারি প্রকাশকরা যেন রেফারেন্স গ্রন্থ এবং সৃজনশীল পদ্ধতির অনুশীলনমূলক সহায়ক গ্রন্থ প্রকাশ ও বাজারজাত করতে পারে সে সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন লোটন।

তিনি বলেন, নোট-গাইড ক্ষতিকর হলে অভিভাবকরা সন্তানকে তা কিনে দিতেন না। সরকারের উচিত ছিলো উভয়পক্ষের মধ্যে সমন্বয় করে আইনটি করা।
অবৈধ এসব বই বিক্রি করতে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হয় কি-না জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্নে বলেন, ‘নোট-গাইড বিক্রি করে কারো ক্ষতি হচ্ছে না। তাই ক্ষতি না হলে পুলিশ বাধা দেবে কেন?’

নোট গাইড নিষিদ্ধ আইন-১৯৮০ এখনো বলবৎ আছে স্বীকার করে পুস্তক সমিতির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন বলেন, দেশব্যাপী চাহিদার কারণে গাইড ছাপতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।