জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: সৌন্দর্য আর সাংস্কৃতিক রাজধানী বলেই খ্যাতি আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। এই খ্যাতিকে অক্ষুন্ন রাখতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এবং একমাত্র নৃত্যভিত্তিক সংগঠন ‘কালবৈশাখী’।
‘নৃত্যের ঝংকারে, স্পর্ধার হুংকার’ এই স্লোগানে শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এই নৃত্যভিত্তিক সংগঠন ‘কালবৈশাখী’ উদ্দাম কালবৈশাখীর মতেই ঝড়ের বেগে প্রবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। এখন প্রায় সময়ই সংগঠনটির সদস্যদের নাচের অপূর্ব ভঙ্গি আর নূপুরের ঝংকারে কম্পিত হয় ক্যাম্পাস। অসাধারণ নৃত্য উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রথম অনুষ্ঠানেই দর্শকদের মাতিয়ে তুলেছে নৃত্য শিল্পীরা ।
নাটক, কবিতা, গান, আবৃত্তি আর বিতর্ক সংগঠনগুলোর সাথে নতুন যুক্ত হওয়া এই সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নৃত্যের মাধ্যমে নতুনের বার্তা শোনায়।
মূলত আন্তঃর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পূজা বিশ্বাস ও একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী মারুফ আক্তার স্বর্ণার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পায় ‘কালবৈশাখী’। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনের সদস্যরা নিরলস পরিশ্রম করে অল্প সময়ে ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাহিরে ৬টি সফল অনুষ্ঠান করেছে। বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ২৫ জন।
সংগঠন সম্পর্কে পূজা বিশ্বাস বলেন, সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠন থাকলেও নাচের কোনও সংগঠন ছিল না। যেহেতু আমি আগে থেকেই নাচ নিয়ে কাজ করছিলাম তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই নাচের এই সংগঠনের অভাব বোধ করতে থাকি। আমি প্রথমে থিয়েটার যাওয়ার শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেখানে নৃত্য নিয়ে খুব বেশি কাজ করার সুযোগ ছিল না। পরবর্তীতে একবছর পর স্বর্নার সঙ্গে আমার দেখা হয়। সেও আগে থেকে নৃত্য নিয়ে কাজ করছিল। তার সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটি নৃত্যকেন্দ্রীক সংগঠন প্রতিষ্ঠার লক্ষে কাজ করতে থাকি। এ লক্ষে আমরা কয়েকজন শিক্ষককের সঙ্গে কথা বললে তারাও আমাদের উৎসাহ দেন। পরে ২ বৈশাখ আমাদের সংগঠনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় এবং আমরা এই সংগঠনটির নাম দেই ‘কালবৈশাখী’।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পূর্বে যারা নৃত্য নিয়ে কাজ করছিলেন কিন্তু ক্যাম্পাসে ভর্তির পর প্লাটফর্মের অভাবে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন তাদের একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসার জন্যই নৃত্যভিত্তিক এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে জানান তিনি।
সংগঠনটির সদস্য আলিফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যারা নৃত্য নিয়ে কাজ করতে চায় বা আগ্রহ প্রকাশ করে তারা এই সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতে পারে। আমরা শাস্ত্রীয় নাচের পাশাপাশি ফোক, মর্ডান, কনটেমপোরারি, হিপহপ, সালসা, ব্যালেটসহ প্রায় সব ধরণের নৃত্য নিয়ে কাজ করি। এছাড়া আগামীতে আঞ্চলিক নৃত্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। আমি স্বপ্ন দেখি নৃত্য সম্পর্কে মানুষের ধারণা পরিবর্তন হবে এবং এটি একটি শ্রেষ্ঠ শিল্পে পরিণত হবে।
সংগঠনটির উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আফসার আহমদ, আন্তঃর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ মঈনুল হাসনাত ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
অধ্যাপক আফসার আহমদ বলেন, সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃত্যের কোনও সংগঠন ছিল না। কালবৈশাখীর কয়েকজন সদস্য যখন এই সংগঠনটি করার প্রস্তাব নিয়ে আমার কাছে আসে তখন আমি তাদের সার্বিক সহযোগীতা করার আশ্বাস দেই। পরবর্তীতে তারা প্রথম যে অনুষ্ঠানটি করে সেটি ক্যাম্পাসের দর্শকদের নজর কারে। পরের অনুষ্ঠানটি আমি দেখতে পারি নি। তবে শুনেছি খুব ভাল করেছে। বাজেট সল্পতার কারণে হয়তো কিছুটা কষ্ট করতে হয়েছে। তবে পরবর্তীতে আমরা আরো ভালো অনুষ্ঠান করতে পারব। এই সংগঠনের নৃত্য শিল্পীরা একদিন জাতীয় বা আন্তঃর্জাতিক পর্যায়ে ভাল করবে এটাই প্রত্যাশা করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এ সংগঠনটি নৃত্য শিল্পী তৈরিতে ভূমিকা রাখবে এবং ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাহিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে নিয়ে আসবে এমন প্রত্যাশা সকলের।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৪