ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ...

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৪
মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ... ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: বর্তমানে শিক্ষা চলে যাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। দিন দিন বেড়ে চলেছে শিক্ষা ব্যয়।

এ যেন কমছেই না। সন্তানের সুন্দর আগামীর কথা ভেবে ও পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার আশায় এ ব্যয় না করে বর্তমানে কোনো উপায়ও নেই অভিভাবকদের।

ফলে বৃহত্তর ময়মনসিংহে থমকে যাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার স্বপ্ন।

এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ‌ঊর্ধ্বগতি। এতে বিপাকে মানুষ। তার ওপর আবার  শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির পরিস্থিতিতে জনসাধারণের আয়ের একটা বড় অংশই খরচ হয়ে হচ্ছে।

ক্রম বৃদ্ধি পাওয়া শিক্ষার পেছনে খরচ করতে করতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পিঠ এখন দেয়ালে! এমনটাই বলছেন অভিভাবকরা।

জানা যায়, শিক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের নিম্ন ও মধ্যবিত্তের অবস্থা সব চেয়ে বেশি করুণ। এ থেকে সহসাই উত্তরণের কোনো পথ খোলা নেই এও বলছেন তারা।

গত কয়েক বছরে শিক্ষা নামক ‘আলোক উজ্জ্বল’ শব্দটি এখন গোলকধাঁধায় রূপ নিয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের খরচ আগের চেয়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হওয়ায় স্বল্প ও মধ্যবিত্তের বাজেটে টান পড়েছে।

একদিকে মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। দুই বেলা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা আর সন্তানের লেখাপড়ার খরচ পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার ওপর আবার শিক্ষার ব্যয় দিন দিন বাড়তে থাকায় মানুষের করুণ অবস্থা।

সরকার প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষা খাতে বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। কিন্তু তারপরও কমছে না শিক্ষা খাতে মানুষের ব্যক্তিগত খরচ।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ পর্যায়ে শিক্ষা নিতে এখন অভিভাবককে ব্যয় করতে হয় বিপুল অংকের টাকা।

ময়মনসিংহ শহরের উচ্চ মাধ্যমিক কলেজগুলোর ক্লাস শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে সব ধরনের বইয়ের দামও বেড়েছে। যা গড়ে ৪০ শতাংশ।

অপেক্ষাকৃত ভাল কলমের দামও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। ৪ টাকার কলম বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা।

কাগজের রিম ১৭৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন ঠেকেছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়।

ফলে পড়ালেখার প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গ কাগজ-বই-কলম কিনতে বেগ পেতে হচ্ছে স্বল্প ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অভিভাবকদের।

অন্যদিকে, ময়মনসিংহ শহরের স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা বাজারের অস্থিরতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাইভেট ফিও বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন  কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা আবার নিজেদের পড়াশুনার খরচ চালাতে হয়েছেন গৃহশিক্ষক।

এক বিষয় পড়ানোর জন্য আগে যেখানে তাদের মাসিক বেতন ১ থেকে দেড় হাজার টাকা। এখন সেখানে তাদের দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা, এমনটি জানান রিটায়ার্ড আর্মি সার্জেন্ট আব্দুল আউয়ালসহ বেশ কয়েকজন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অভিভাবক।

সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের জিলা স্কুল, বিদ্যাময়ী স্কুল, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, কমার্স কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোতে ব্যস্ত রয়েছেন।

এসব শিক্ষকরা বিষয় অনুযায়ী পড়ানোর জন্য ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। কোচিং সেন্টারগুলোর টাকাও গলা কাটা।

শুধু প্রাইভেট, কোচিং, বই-খাতাই নয় কলেজ বা কোচিং-এ যাতায়াত বাবদ মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

তীব্র রোদ কিংবা বৃষ্টি হলে ১০ টাকার ভাড়া গুণতে হয় ২০ টাকা, এমন অভিযোগ করেন কলেজ ছাত্র হানিফ ও অনিক।

নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের এক অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, আমার মেয়ে জানিয়েছে ওর কলেজে কম্পিউটার বিভাগের এক শিক্ষক ব্যাচে পড়াচ্ছেন। ব্যাচে না পড়লে পরীক্ষায় ভালো মার্কস যেমন পাওয়া যাবে না তেমন চূড়ান্ত পরীক্ষায় কাঙ্খিত প্র্যাকটিক্যাল মার্কসও জুটবে না।

তাই কম্পিউটার সাবজেক্টও পড়াতে হচ্ছে ২ হাজার টাকা খরচ করে।

তিনি বলেন, মেয়ের লেখাপড়ার পেছনে মাসে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।

সন্তানের লেখাপড়া না সংসার চালানো, তা নিয়ে তিনি এখন সংশয়ে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

এ সব বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল হক মনে করেন, স্কুল-কলেজে শিক্ষা ব্যয় সীমিত আকারে রাখতে হবে। যাতে করে সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ছেলে-মেয়েরা অন্তত তাদের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে। নয় তো ভবিষ্যতে এ বিষয়টি হয়ে দাঁড়াবে বড় ধরনের অশনি সংকেত!

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।