ঢাকা: অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল। আর সেই প্রতিবন্ধী শিশুদের একটি স্কুল ভেঙে তৈরি হবে রাস্তা।
স্কুল ভাঙ্গার দুঃখে তাই মন খারাপ ওই স্কুলের দৃষ্টি, শ্রবণ, শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার্থীদের। তবে মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকেনি তারা।
প্রাণপ্রিয় স্কুল রক্ষায় রাস্তায় নেমে এসেছে এসব প্রতিবন্ধী শিশু। তাদের সঙ্গে রয়েছেন অভিভাবক-শিক্ষক আর এলাকাবাসীরাও।
রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বর সেকশনে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন ভবনটিতে রয়েছে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ‘কল্যাণী ইনক্লুসিভ প্রাইমারি স্কুল’।
আগারগাঁওস্থ এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) অফিসের সামনে থেকে মিরপুরের দিকে যাওয়া ৬০ ফুট রাস্তাটির মাথায় স্কুলটির অবস্থান। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তাটি এগিয়ে আসলে ভাঙা পড়বে স্কুলটি।
এ পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধীসহ চার শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুলটি রক্ষায় সোমবার সকাল ১১টার দিকে স্কুলের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে অভিভাবকদের সংগঠন প্যারেন্টস ভয়েস।
সাদাছড়ি হাতে মানববন্ধনে অংশ নেন ওই স্কুলের নয়নতারা শাখার পাঁচ বছরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাহির আসফি আরিজ।
স্কুল ভাঙার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আরিজ জানায়, ‘আমরা কোথায় পড়ব, স্কুল ভাঙলে কাঁদবো’।
সঙ্গে থাকা মা জান্নাতুল সুলতানা বলেন, সরকার যখন প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কাজ করছে, তখন এই বৃহৎ স্কুলটি ভাঙা কোনভাবেই ঠিক হবে না।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আসিফ খন্দকার নিবিড় (১০) সাত বছর ধরে পড়ে এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে।
মা সোমা আকতার বাংলানিউজকে বলেন, ছেলেটা স্কুলে আসতে চাইতো না, এখন আসছে, পরীক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু স্কুলটি ভেঙে ফেললে তাকে নিয়ে কোথায় যাব? স্কুল ভাঙলে বাচ্চাটার সব শেষ হয়ে যাবে।
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি ছাড়াও ভোকেশনাল শাখায় পড়ানো হয় এই স্কুলে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী সানজিদা রহমান লিথি (৩০) কারুকর শাখার ছাত্রী। মা দিনারা জাহান পান্থপথ থেকে প্রতিদিন মেয়েকে নিয়ে আসেন স্কুলে।
১৯৯৯ সালে স্পেশাল অলিম্পিকে দুটি গোল্ড মেডেল পাওয়া লিথি ভাল গানও গায় বলে জানান তার মা।
স্কুলটি ভেঙে ফেলা হলে তারা খুবই অসুবিধায় পড়বেন জানিয়ে এই মা বলেন, যাদের পরিবারে একটা প্রতিবন্ধী শিশু আছে তারাই জানে বিষয়টা কত কষ্টের।
শারীরিক প্রতিবন্ধী চয়ন, সাদি, আদিবসহ একাধিক শিক্ষার্থী আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, স্কুল ভাঙলে আমাদের খুবই কষ্ট হবে।
আরেক অভিভাবক তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে অটিস্টিক শিশুদের জন্য পুরস্কার পেলেন, আর প্রতিবন্ধীদের স্কুল ভাঙা হবে এটা মানা যায় না।
গত ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ‘এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয় সায়মা হোসেন পুতুলকে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য চাঁদের হাট, নয়ন তারা, সূর্যমুখী, এ প্লাস, শিশু-১, শিশু-২; এমন বিভিন্ন নামে রয়েছে ক্লাস। স্কুলের এই প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ভবনটির দুই পাশ দিয়ে ইংরেজি ‘ওয়াই’ আকৃতির রাস্তা কিংবা মিরপুরের অন্যত্র একটি ভবন তৈরি করে স্কুলটি স্থানান্তরের দাবি জানান প্যারেন্টস ভয়েস।
প্যারেন্টস ভয়েসের আহ্বায়ক বেলাল উদ্দিন সেতু স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রতিবন্ধীদের জন্য রাজধানীর সবচেয়ে বড় স্কুল এটি।
এই স্কুলের শিক্ষার্থী ইমনের আঁকা একটি ছবি প্রধানমন্ত্রী ঈদ কার্ডের প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে দাবি তার। তিনি বলেন, অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধী শিশুসহ দু’জনের ছবি ওই প্রচ্ছদের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
এছাড়া এ স্কুলের শিশুরা জাতিসংঘের পুরস্কার পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
তারা জানতে পেরেছেন স্কুলটি ভেঙে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি উত্তর) সড়ক নির্মাণ করবে। ইতোমধ্যে আগারগাঁও থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়কের ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। স্কুলটি তুলে ফেলতে ডিসিসি কর্তৃপক্ষ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দিয়েছে। স্কুলের কার্যক্রম জানতে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আমাদের চিঠি দেয়া হয়।
বেলাল বলেন, ১৯৮৭ সালে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ স্কুলের জন্য ১১ কাঠা জমি বরাদ্দ দেয়। ২০০২ সালে সেই জমিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় তিন কোটি ২৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ করে। এই ভবনে স্কুলের কার্যক্রম চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এই স্কুলটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং ডিসিসি উত্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
এ সময় অভিভাবকদের পক্ষে শাহিনা সুলতানা, সদস্য আলী আহমেদ, রাহেলা বেগম, হাবিবুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৪