ঢাকা: গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। উপরন্তু নয় মাস পর প্রকাশ করা হয়েছে সরকারি চাকুরির বড় ক্ষেত্র বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি।
বছরের শুরুতে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নিয়ম থাকলেও এবার ২৩ সেপ্টেম্বর ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), অর্থাৎ নয় মাস পর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলো।
বিসিএস বিধিমালা সংশোধন করে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কমিশন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪’ জারির পর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বর তারিখে সাধারণ প্রার্থীদের বয়স ২১-৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে। আর ২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সালে সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ জন্মতারিখ ধরা হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত।
বছরের নয় মাসের মাথায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় চাকুরির বড় ক্ষেত্রতে প্রার্থীরা ‘ধরা’ খেয়েছেন নয় মাস।
সরকারি চাকুরিতে সাধারণ প্রার্থী ছাড়া কোটার প্রার্থীদের ৩২ বছর বয়সসীমা রয়েছে।
বিসিএস বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা, প্রতিবন্ধী প্রার্থী এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের প্রার্থীর জন্য বয়সসীমা ২১ থেকে ৩১ বছর ধরা হয়েছে। তাদের জন্মতারিখ সর্বনিম্ন ২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ ও সর্বোচ্চ ২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত।
এছাড়া বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের জন্য শুধু উপজাতীয় প্রার্থীর বেলায় ২১ হতে ৩২ বছর বয়সসীমা ধরা হয়েছে (জন্ম তারিখ সর্বনিম্ন ২-৯-৯৩ সর্বোচ্চ ২-৯-৮২)।
বয়স না বাড়িয়ে দেরিতে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন চাকুরীপ্রার্থীরা।
সেপ্টেম্বর মাসে ৩০ বছর অতিক্রম হওয়া একাধিক বাংলানিউজকে বলেছেন, দেরিতে বিসিএস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ায় চাকুরিজীবন থেকে নয় মাস হারিয়ে গেল।
এই নয় মাসের দায় কে নেবে জানিয়ে খোরশেদ আলম, মিজানুর রহমানসহ একাধিক চাকুরিপ্রার্থী বলেন, ঈদের পর তারা আন্দোলন শুরু করবেন।
চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য এর আগেও ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন।
কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন শাহবাগে। পুলিশি লাঠিপেটারও শিকার হয়েছেন তারা।
সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৬৯ বছর।
বিবিএস’র ২০১১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছরই এ আয়ু বাড়ছে। ২০০৫ সালে ৬৫ দশমিক ২, ২০০৬ সালের ৬৬ দশমিক ৫, ২০০৭ সালে ৬৬ দশমিক ৬, ২০০৮ সালে ৬৬ দশমিক ৮, ২০০৯ সালে ৭৬ দশমিক ২, ২০১০ সালে ৬৭ দশমিক ৭ এবং ২০১১ সালে গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬৯ বছর।
বর্তমান সরকারের সময়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে এখন ৫৯ বছর করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে যা ছিল ৫৭ বছর। আর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের সীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করেন। তারাই চাকরির প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়।
কিন্তু সেশনজটের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চার বছরের সম্মান শেষ করতে সময় লাগছে ছয় বছর। এরপর এক বছরের স্নাতকোত্তর শেষ করতে অতিরিক্ত আরও এক বছর ব্যয় হয়। শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ প্রবণতা আরও বেশি।
এর আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৫ থেকে বাড়িয়ে ২৭ এবং সর্বশেষ ৩০ বছর করা হয়।
মহাজোট সরকারের আমলে জনপ্রশাসন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করার সুপারিশ করেছিল।
বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেরিতে প্রকাশ করায় ক্ষতিগ্রস্ত চাকুরিপ্রার্থীদের দায় নিতে চাচ্ছে না কেউই।
পিএসসির একজন সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, বিধিমালা সংশোধন হলেও বয়স বাড়েনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ না নিলে তাদের কিছুই করার নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৪