ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: রাত আড়াইটা। হঠাৎ এক বড় ভাইয়ের ফোন।
রক্ত সংগ্রহের এমন অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন মাস্টারদা’ সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী এবং ওই হলের বাধঁন ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক নাইম আহমেদ শুভ।
এভাবে প্রতিনিয়ত জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে রক্ত দিয়ে অনেক মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী।
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেই নয়, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা মানবতার সেবায়ও নিবেদিত প্রাণ।
স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন’র বার্ষিক বিবরণীর তথ্য অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জোনাল অফিস থেকে ২০১৪ সালে ১১ হাজার ৫৪ ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হয়েছে। এই রক্তদাতাদের ৯০ শতাংশই ঢাবির শিক্ষার্থী বলে জানায় বাঁধন অফিস।
সে হিসেবে বছরে ১০ সহস্রাধিক ব্যাগ রক্ত দান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। যাদের বেশিরভাগই আবার বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
বাঁধনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছেন শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা। ওই হলের বাঁধন ইউনিট গত বছর এক হাজার ৫শ’ ৭৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে। এরপরেই রয়েছেন মাস্টারদা’ সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীরা। ওই হল থেকে সংগৃহীত হয় এক হাজার ৪শ’৬৩ ব্যাগ রক্ত। পরের অবস্থানটি কবি জসীম উদদীন হলের শিক্ষার্থীদের। ২০১৪ সালে ওই হল থেকে সংগৃহীত হয় এক হাজার ৫৮ ব্যাগ রক্ত।
রক্তদানে পিছিয়ে নেই ছাত্রীরাও। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রোকেয়া হলের মেয়েরা। ২০১৪ সালে ওই হল থেকে সংগৃহীত হয় ৩শ’ ১০ ব্যাগ রক্ত। এরপর শামসুন নাহার হল। ওই হলের মেয়েরা দেন ২শ’ ৭১ ব্যাগ রক্ত। নতুন প্রতিষ্ঠিত কবি সুফিয়া কামাল হলের মেয়েরা দিয়েছেন ১শ’ ২ ব্যাগ রক্ত।
বাঁধনের মাধ্যমে রক্ত আদান প্রদান প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সূর্যসেন হল ইউনিট বাঁধন’র সাধারণ সম্পাদক বাংলানিউজকে বলেন, বাঁধন কোনো ব্লাড ব্যাংক বা সন্ধানীর মত প্রতিষ্ঠান নয়। আমরা রক্ত জমা রাখি না। যখন কোনো রোগী রক্তের চাহিদাপত্র নিয়ে আমাদের কাছে আসে, তখন প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা ডোনার সরবরাহ করি। ডোনার সরাসরি গিয়ে রক্ত দিয়ে আসেন।
তবে অনেক সময় অনেকে ভুয়া চাহিদাপত্রও নিয়ে আসে বলে জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে রক্তদাতা ও বাঁধন উভয়কেই বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় বলে জানান নাইম আহমেদ শুভ।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু বাঁধনের মাধ্যমেই নয়, ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে রক্ত দান করেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে রক্তদাতাদের পরিমাণ বাঁধনের চেয়েও বেশি। তবে সে হিসেবে কেউ রাখে না বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় না।
সূর্যসেন হলের আরেক শিক্ষার্থী মির আরশাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমি গত দুই বছরে সাত বার রক্ত দিয়েছি। তবে এক বারও বাঁধনের মাধ্যমে দিইনি। কারণ যাদের রক্তের প্রয়োজন ছিল, তারা আমার পরিচিত অথবা আত্মীয়ের আত্মীয়।
জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের রক্তদানকে অত্যন্ত প্রশংসনীয় হিসেবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে মুমূর্ষ রোগীর জীবন বাঁচিয়ে তোলার এ ব্যাপারটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে চিরায়ত ঐতিহ্য এ মহৎ কাজের মাধ্যমে সেটিকেই এগিয়ে নিচ্ছেন বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা।
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, যেসব মুমুর্ষ রোগীকে আমাদের শিক্ষার্থীরা রক্তদান করে তাদের অনেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে কৃতজ্ঞতা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার এ ব্যাপারটিকে দেশবাসী অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫