ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবির ব্যাংকিং বিভাগে ১২৯ শিক্ষার্থীর ৫১ ফেল

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৫
ঢাবির ব্যাংকিং বিভাগে ১২৯ শিক্ষার্থীর ৫১ ফেল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাণিজ্য অনুষদভুক্ত ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ (১৯তম ব্যাচ) ৪র্থ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ব্যাপক ফল বিপর্যয় ঘটেছে।

চতুর্থ সেমিস্টারে কোর্স ছিলো পাঁচটি।

পরীক্ষায় মোট ১২৯ জন অংশ নিয়ে ফেল করেছেন ৫১ জন। এর মধ্যে একটি কোর্সেই ফেল করেছেন ৫০ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া সবগুলো কোর্সে ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩।

গত ১৮ মে প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া যায়। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ফল বিপর্যয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে ফলাফল বিপর্যয়ের এ খবর এই প্রতিবেদকের কাছেই প্রথম শুনেছেন জানিয়ে এ ফলাফলকে অস্বাভাকি বলেছেন ১৯তম ব্যাচের ফলাফল কমিটির চেয়ারম্যান, বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইতুল ইসলাম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কোর্সটিতে গাণিতিক টার্ম থাকায় ফলাফল খারাপ হতেই পারে। তবে একটি কোর্সে এতজন ফেল করার বিষয়টি অস্বাভাবিক।

প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোর্স নম্বর-২০৭ (ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট)-এ ৫০ জন শিক্ষার্থী পাস মার্ক (৪০ শতাংশ) পাননি।
এছাড়া কোর্স নম্বর ২০৬ (কম্প্যারাটিভ ব্যাংকিং)-এ ফেল করেছেন ১৭ জন, ২০৮ (মার্কেটিং)-এ ফেল করেছেন ১৪ জন, ২০৯ (ম্যাক্রো ইকোনোমিক্স)-এ ফেল করেছেন ১৫ জন এবং ২১০ (ব্যাংক ইনফরমেশন সিস্টেম অ্যান্ড ই ব্যাংকিং)-এ ফেল করেছেন ১৬ জন শিক্ষার্থী।

২০৭ নম্বর কোর্সে পাস করেও অন্য কোর্সে ফেল করেছেন, এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১। বাকি ৫০ জন কেবল ২০৭ বা এ কোর্সসহ অন্য এক বা একাধিক কোর্সে ফেল করেছেন।

তবে ২০৭ নম্বর কোর্সের শিক্ষক ব্যাংকিং বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক হাসিবুল আলম চৌধুরী দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সদুত্তর দিতে পারেননি ফলাফল কমিটি ও মার্কশিট তৈরির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরাও।

বিশ্ববিদ্যালয় ডায়েরিতে দেওয়া হাসিবুল আলমের ইমেইল আইডিতে বক্তব্য জানতে চেয়ে বার্তা পাঠালেও ওই আইডিটি ডিঅ্যাক্টিভ থাকায় সে বার্তা পাঠানো যায়নি।

ফলাফল কমিটির অন্যতম সদস্য ও মার্কশিট তৈরির দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান খান (এ আর খান) বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যেভাবে ফলাফল পেয়েছি সেভাবেই সমন্বয় করে প্রকাশ করেছি। এর বাইরে আমাদের কোনো হাত নেই।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ধরুন বাজার থেকে আপনি মাছ এনে দিয়েছেন। আমি কেবল তা কেটেকুটে পরিবেশন করেছি। মাছ কম বা বেশি হলো কেন সেটাতো আমি বলতে পারবো না।

একই কথা বলেন ফলাফল কমিটির অপর সদস্য ও মার্কশিট তৈরির দায়িত্বে থাকা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মাইন উদ্দিনও।

ফল প্রকাশের পর ১৯তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংকিং বিভাগের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে লিখেছেন, একটা কোর্সে ১২৯ জন স্টুডেন্টের ৫১জন কীভাবে ফেল করে? সেই কোর্সে ৪০ এ ২৩ পাওয়ার পরেও বাকি ৬০ এ কেন ১৭ উঠলো না? আমাদের FBS (বাণিজ্য অনুষদ)-এর অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট (বিভাগ) এর ছাত্রছাত্রী যখন ৩.৭৫ সিজিপিএ নিয়েও অখুশি থাকে, আমাদের কেন কোনো রকম পাস করেই খুশিতে আত্মহারা হতে হয়?

অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা যখন ভালো ফল করে ব্যাংকিং সেক্টরে আসবে তখন ব্যাংকিংয়ে পড়েও ফলাফল খারাপ হওয়ায় এ সেক্টরে চাকরি পাওয়া কষ্টকর হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ওই শিক্ষার্থী আরও লিখেছেন, আমরাতো ওদের (বাণিজ্য অনুষদের অন্য বিভাগ) চেয়ে কম চেষ্টা করি না, আমরা কি ওদের চেয়ে আসলে মেধায় দুর্বল? যদি তাই হবে, তাহলে আমাদের মেধাক্রম এতো আগে ছিলো কেনো? 

ব্যাংকগুলো দিন দিন যত বেশি সিজিপিএ চাইছে বিভাগের শিক্ষকরা তত কম সিজিপিএ দিচ্ছেন কেন? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তবে ফল খারাপ হওয়ার কারণ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা আবেদন করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ডিন শিবলী রুবাইতুল ইসলাম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কেউ যদি নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক হয় তবে নাম না প্রকাশ করেও অভিযোগ দিতে পারে। আমি সেটা বিবেচনা করবো। ওই কোর্সের শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে মূল সমস্যাটি জানতে চেষ্টা করবো। যদি ওই শিক্ষক না পড়াতে পারেন বা শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না বুঝতে পারেন তাহলে সে ব্যাপারটিও দেখা হবে।

বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, যারা ফেল করেন ফল প্রকাশের ৪০ দিনের মধ্যে তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা (সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা) নেওয়া হয়। ওই পরীক্ষায় পাস করলে শিক্ষার্থীদের আর শিক্ষাবর্ষ ড্রপ হয় না।

এদিকে সেমিস্টার ফাইনালে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের নিয়ম থাকলেও ব্যাংকিং বিভাগের ১৯তম ব্যাচের ফল প্রকাশ হয়েছে প্রায় ছয় মাস পর। অন্য ব্যাচের ফল এখনো প্রকাশ হয়নি। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে এ বিভাগের চলমান সবগুলো ব্যাচের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হয়।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিবলী রুবাইতুল ইসলাম জানান, আমাদের বিভাগে সাধারণত সময়মতো ফলাফল প্রকাশ হয়। তবে এবার রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ফল প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সব সময়ই দেরি করে প্রকাশ করা হয় ব্যাংকিং বিভাগের ফলাফল। ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় কেউ খারাপ করলে সেটি সাপ্লিমেন্ট দিয়ে ফল পেতে পরের শিক্ষাবর্ষ চলে আসে। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৫
 এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।