ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

আইন শিক্ষা

আট বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি কমিশনের সুপারিশ

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৫
আট বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি কমিশনের সুপারিশ প্রতীকী ছবি

ঢাকা: বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আইন শিক্ষার ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যে কলেজের দু’বছরের আইন কোর্স তিন বছরে উন্নিত করা হয়। এ লক্ষ্যে আইন কমিশনের করা সুপারিশ আট বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি।

একইসঙ্গে আইন শিক্ষার সংস্কার ও সংশোধন জরুরি বলেও সুপারিশে উল্লেখ করেছিল কমিশন।
 
এছাড়া কলেজের আইন বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা চালু, আসন সংখ্যা সীমিত করা, বাধ্যতামূলক পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ, পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধার ব্যবস্থা করতেও বলা হয় সুপারিশে।
 
সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে আইন শিক্ষা নিয়ে সরকারের কাছে এসব সুপারিশ করে বাংলাদেশ আইন কমিশন। এরপর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায়, সুপারিশগুলো বাংলা করে ফের ২০০৯ সালের শেষ দিকে মন্ত্রণালয়ে পাঠায় কমিশন।
 
এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ বার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দেওয়ার পরও তা আলোর মুখ দেখেনি। এমনটিই জানিয়েছেন আইন শিক্ষা সংস্কার করতে সুপারিশসহ প্রতিবেদন তৈরি কমিটির প্রধান ও আইন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহ আলম।
 
এসব সুপারিশের মধ্যে আরো বলা হয়, আইন শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান ও তদারকি করতে একটি ‘জাতীয় আইনশিক্ষা পরিষদ’ গঠন করতে হবে। বার কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সহযোগিতায় এ পরিষদ কাজ করবে। পরিষদ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল আদেশ, ১৯৭২ আইনের সংশোধনের কথা বলা হয়।
 
এ আইনশিক্ষা পরিষদ গঠন প্রক্রিয়াধীন সময়ে বার কাউন্সিলের ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্প্রসারণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়।
 
অ্যাডভোকেট থেকে বার কাউন্সিলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে অতিরিক্ত এক বছর ভোকেশনাল কোর্স চালু করতে বলা হয় আইনে। আইন পরিষদ এ কোর্স সম্পন্ন করবে। তবে পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত বার কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে এ কোর্স পরিচালিত হবে।
 
অন্যদিকে, আইন শিক্ষাদানে অধিকতর ব্যবহারিক পদ্ধতি চালু, আইন পাঠ্যে জাতীয় ইতিহাস, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয় ওই সুপারিশে।
 
এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়সহ করপোরেট ল, প্রাইভেট ইন্টারন্যাশনাল ল, তুলনামূলক আইন, ই-কমার্স, মেধাস্বত্ব আইন, সাইবার ল, পরিবেশ আইন, আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ফরেনসিক আইন পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়।
 
সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলএম কোর্স গবেষণা ভিত্তিক করতে বলা হয়, যেখানে নির্বাচিত আইন ডিগ্রিধারী যোগ্যতা সম্পন্নদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
এছাড়াও সরকারি অনুদানে আদর্শ আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মৌলিক আইন কোর্স চালু, বিএ ও বিএসএস (পাস) কোর্সে আইনকে ঐচ্ছিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে বলেও সুপারিশ করা হয়। শিক্ষকদের প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা জোরদার করা ও শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।
 
এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আইন ডিগ্রিধারীদের পেশাগত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিসিএস (আইন) ক্যাডার চালু করার কথা বলা হয় সুপারিশে।
 
এ বিষয়ে আইন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, আইন শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে একটি প্রজেক্টের অধীনে তিন বছর এ নিয়ে কাজ করেছি। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ৭/৮টি ওয়ার্কশপ করা হয়। দেশের আইন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নিয়ে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। যা আইন কমিশনের ইতিহাসে একটি বড় কাজ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
 
তিনি জানান, এরপর ২০০৭ সালে প্রতিবেদনটি সুপারিশসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় দু’বছর পর ২০০৯ সালে ফের ফাইলটি পাঠানো হয়। পরে বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশগুলোর কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ১০/১২ বার মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠিও দেওয়া হয়। তারপরও ‘অজ্ঞাত’ কারণে আইন শিক্ষার এসব সুপারিশ নিয়ে কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসেনি বলে জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিব (জেলা জজ) আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আইন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে জাতীয় আইন শিক্ষা পরিষদ গঠন হয়নি। এছাড়া অ্যাডভোকেট থেকে বার কাউন্সিলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে ‘অতিরিক্ত এক বছর আইনে ভোকেশনাল কোর্স’ ও চালু হয়নি।
 
সুপারিশগুলো কার্যকরে কোনো অগ্রগতি আছে কি-না এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বার কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক (প্রশাষণ) নাজমুল আহসান জানান, আইন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আপাতত এর কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৫
টিএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।