ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

তিন বোর্ডের এগিয়ে থাকার নেপথ্যে...

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৫
তিন বোর্ডের এগিয়ে থাকার নেপথ্যে... ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটায় প্রভাব পড়েছে সাত শিক্ষা বোর্ডে। তবে অন্য বোর্ডগুলোর তুলনায় হরতাল-অবরোধেও রাজশাহী, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ফল পতন ঘটেনি।



পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে ‘মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি’ রাজশাহী ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। আর মাদরাসা বোর্ডের ভাল ফলে প্রভাব ফেলেছে দু’টি বিষয়ে নম্বর বৃদ্ধি ও আবশ্যিক বিষয়।

সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করে অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় তিন বোর্ডের ভাল ফলের এ কারণ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে, হরতাল-অবরোধ ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি গণিত বিষয়ে ফেলের কারণে পাসের হার কমেছে সিলেট বোর্ডে।

শনিবার (৩০ মে) ফলাফল প্রকাশের পর ৯৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ পাস নিয়ে শীর্ষে থাকা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, উত্তরপত্র মূল্যায়নে ‘যত্নবান’ হওয়ার কারণে ফলের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা গেছে।

অন্যদিকে, হরতাল-অবরোধেও এবার কারিগরি ও মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার বেড়েছে। ৯০ দশমিক ২০ শতাংশ পাস নিয়ে এগিয়ে থাকা মাদরাসা বোর্ডে গত বছর পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর কারিগরিতে পাসের হার ৮৩ দশমিক ০১ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

এবার ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৮৫ দশমিক ০৫ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে পাসের ৮৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৮৪ দশমিক ২২ শতাংশ, যশোর বোর্ডে পাসের হার ৮৪ দশমিক ০২ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশ।
 
অন্য বোর্ডের তুলনা পাসের হারে প্রভাব না পড়া প্রসঙ্গে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চোরম্যান আবুল হায়াত বাংলানিউজকে বলেন, তিন কারণে এটা হছে। ‘প্রথমত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ভাল দিয়েছে, দ্বিতীয়ত মনিটরিং ভাল হয়েছে। আমিসহ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আর তৃতীয়ত বারবার পরীক্ষকদের বলেছি, সারা দেশে যেহেতু অস্থির পরিবেশ, সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন যেন শিক্ষার্থীদের ক্ষতি না হয়।
 
তবে গতবারের তুলনা পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে বলেও জানান রাজশাহী বোর্ড চেয়ারম্যান।
 
রাজশাহীতে এবার পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০১৪ সালে এ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গতবার বোর্ডটিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৯ হাজার ৮১৫ জন। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮৭৩ জনে।

মাদরাসা বোর্ডের চোরম্যান এ কে এম ছাফে উল্ল্যা বাংলানিউজকে বলেন, আগে উচ্চতর গণিত ও জীববিজ্ঞান ঐচ্ছিক ছিল। এবার তার মধ্যে কোনোটি আবশ্যিক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। বেশিরভাগ ছাত্র উচ্চতর গণিত আবশ্যিক হিসেবে নিয়ে ভাল নম্বর পেয়েছে।

পাশাপাশি আগে ইংরেজি ও বাংলায় ১০০ নম্বর করে পরীক্ষা হলেও এবার ২০০ নম্বর করে পরীক্ষা হয়েছে, এ কারণে ফল ভালো হয়েছে।

হরতালে পরীক্ষা দিয়ে যেন শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য উত্তরপত্র মূল্যায়নে পরীক্ষকদের ‘মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি’ দিয়ে মূল্যায়নের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সার্বিকভাবে ফলাফলে গতবারের তুলনায় পাস ও জিপিএ-৫ এর পরিমাণ কমেছে বলে স্বীকার করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

ফলাফল প্রকাশের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চরম অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও ভীতির মধ্যে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছে। এ কারণে পাস ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কমেছে।
  
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, গতবার মোট পাসের হার ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ থাকলেও এবার পাসের হার ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। আর এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন, গত বছর পেয়েছিল এক লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন।

সব থেকে পিছিয়ে থাকা প্রসঙ্গে সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মমতাজ শামীম বাংলানিউজকে বলেন, গণিতে অকৃতকার্যের সংখ্যা এবার বেশি হওয়ায় পাসের হার কমেছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধের কারণে একটি পরীক্ষাও নির্ধারিত দিনে অনুষ্ঠিত হয়নি। ৬ ফেব্রুয়ারি শুরু করে হরতালে ১৬ দিনে মোট ৩৬৮টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। গত ৩০ মার্চ পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয় ৩ এপ্রিল।

হরতালের কারণে ব্যবহারিক পরীক্ষা পিছিয়ে ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করা হয়।

** উত্তরপত্র মূল্যায়নে ‘মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি’

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৫
এমআইএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।