ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ছেলের গোল্ডেন প্লাসের খবরেও দেখতে আসেনি বাবা

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৫
ছেলের গোল্ডেন প্লাসের খবরেও দেখতে আসেনি বাবা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জয়পুরহাট: সপ্তাহে তিন দিন ট্রাউজার সেলাই করে শহরে মহাজনের দোকানে পৌঁছে দিলে ১২০ টাকা হাতে পান জয়পুরহাটের ভাদশা ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের নূরবানু নামে এক নারী। আর সেই টাকা দিয়েই কোন মতে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়াটাও চালিয়ে আসছেন তিনি।



সংগ্রামী এই নারীর সংসারে ২ ছেলে, ১ মেয়ে। এদের মধ্যে সবার বড় ছেলে নূরন্নবী এবার এসএসসি পরীক্ষায় ভাদশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। আর এ খবরে নূরন্নবীর মা, শিক্ষক, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাই খুশি। তবে, জন্মদাতা বাবা বাবলু মিয়া হয়তো খুশি নন!

পরীক্ষার ফল জেনে আনন্দে আত্মহারা নূরন্নবী রংপুর শহরে থাকা তার বাবাকে জানালেও তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আসেন নি। উপরন্তু বলেছেন, কি হবে লেখা-পড়া করে, কাজে যোগ দে। আর জন্মদাতা বাবার এমন মন্তব্যে অনেকটা ঘাবড়ে গেছেন মেধাবী এই ছাত্র।

সরেজমিনে তার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, ছোট একটি কুড়ে ঘরে হতভাগ্য মাকে নিয়ে তাদের সংসার। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পুরনো একটি টুল বের করে বিনয়ের সঙ্গে বসতে বললেন নূরন্নবীর মা। পরে, তিনি অনেকটা আক্ষেপের সঙ্গে জানান, স্বামী থেকেও না থাকার মতো। প্রায় সাত বছর আগে স্ত্রী-সন্তান রেখে রংপুরের বৈরাগীগঞ্জ এলাকায় ২য় বিয়ে করে নতুন সংসার পেতেছেন। বছরে ২/৩ বার মনে ধরলে জয়পুরহাটে আসলেও সংসারের কোন খোঁজখবর রাখেন না।

তিনি আরো জানান, ছেলে প্রচণ্ড মেধাবী হওয়ায় অনেক কষ্ট করে কোনমতে লেখাপড়াটা চালিয়ে এসেছি এতোদিন। কিন্তু ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে কিংবা প্রাইভেট/কোচিং করাতে যে অর্থের প্রয়োজন, তা কিভাবে যোগান দেবো।    

নূরন্নবী বাংলানিউজকে জানায়, ৫ম শ্রেণিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং ৮ম শ্রেণিতে উপজেলা পর্যায়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। তারপর থেকেই লেখাপড়ায় আরো বেশি মনোযোগী হয়ে ছোট ছেলে-মেয়েদের টিউশনি করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন প্লাস পেয়েছি। ভাল রেজাল্ট নিয়ে স্বপ্ন ছিল ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু অর্থাভাবে সে স্বপ্ন পূরণ হবে না। তবে, জয়পুরহাট সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ডাক্তারি লাইনে পড়াশোনা করার ইচ্ছা তার।

ভাদশা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, মেধাবী ছাত্র নূরন্নবী আঁধার ঘরে যেন চাঁদের আলো। এমন সন্তান সব ঘরে জন্মায় না। এমন দরিদ্র মেধাবীদের জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শিক্ষক।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৫      
এমজেড/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।