ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

৪র্থ বর্ষের রুটিনে অসন্তোষ, পরীক্ষা পেছানোর দাবি

নূরনবী সিদ্দিক সুইন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৫
৪র্থ বর্ষের রুটিনে অসন্তোষ, পরীক্ষা পেছানোর দাবি

ঢাকা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩ সালের ৪তুর্থ বর্ষ অনার্স(বিএ/বিএসএস/বিবিএ/বিবিএস) ফাইনাল পরীক্ষার ফরম ফিলাপ শেষ না হতেই পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে। ঘোষিত রুটিন মোতাবেক ২৫ জুন থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা।



কিন্তু ১ জুন প্রকাশিত এ রুটিন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তারা পরীক্ষা পেছানোর জন্য এরইমধ্যে বিভিন্ন কলেজে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে। এই রুটিন প্রত্যাহার না করা হলে বড় ধরনের আন্দোলন করার কথাও ভাবছে তারা।

শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, সেশনজট কমাতে পরীক্ষা তাড়াতাড়ি নেওয়া হোক, রোজার মধ্যেও তা হতে পারতো। কিন্তু যেখানে ৩য় বর্ষের পরীক্ষাই শেষ হবেনা। সেখানে নতুন করে ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা শুরু হলে তা বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করবে। যার মানোন্নয়ন পরীক্ষা আছে তাকে আগেরদিন ৩য় বর্ষের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে পরেরদিন সকালে ৪র্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে হবে। এটা কী করে সম্ভব। তাই এ রুটিন সমন্বয় করে প্রয়োজনে রোজার পর থেকে পরীক্ষা গ্রহণ করা হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৩য় বর্ষ পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ১০ই জুন। আর ২৫ই জুন থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স চতুর্থ বর্ষের সময়সূচি ঘোষণা করেছে। যার ফলে অধিকাংশ মানোন্নয়ন দেয়া পরীক্ষার্থী বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে, অর্থাৎ তারা না পারবে ভাল করে মানোন্নয়ন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে- না পারবে নিয়মিত চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ও ভাল পরীক্ষা দিতে। কারণ প্রত্যেক বিভাগেরই ৫-৬টা পরীক্ষার সময়সূচি হয়েছে পরের দিন করে করে, অর্থাৎ আজ ৩য় বর্ষের পরীক্ষা তো পরের দিন চতুর্থ বর্ষের।

রুটিন পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ২৪ জুন ৩য় বর্ষ, ২৫ জুন চতুর্থ বর্ষ, ২৭ জুন ৩য় বর্ষ, ২৮ জুন চতুর্থ বর্ষ, ১ জুলাই ৩য় বর্ষ, ২ জুলাই ৪র্থ বর্ষ, ৪ জুলাই ৩য় বর্ষ, ৫ জুলাই ৪তুর্থ বর্ষের পরীক্ষা রয়েছে। একইভাবে ৮ জুলাই ৩য় ও ৪র্থ বর্ষের দুটোতেই পরীক্ষা রয়েছে।

৮ জুলাই তারিখে যারা ইংরেজি, বাংলা, ইতিহাস ইসলামের ইতিহাস ও ইসলাম শিক্ষার আছে তারা কেউ যদি ৩য় বর্ষ মানোউন্নয়ন পরীক্ষা দেয় তাহলে তারা কেমনে ৪র্থ বর্ষে পরীক্ষা দেবে? এমন প্রশ্নও কয়েকজন শিক্ষার্থীর।

কিছু কিছু পরীক্ষার্থী সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা অনেক কষ্ট করে ছোটখাট চাকরির পাশাপাশি পড়ালেখা চালাচ্ছে, যার ফলে তাদের অনেককেই ২, ৩, ৪ এমনকি কাউকে ৫টা বিষয়ে ও মানোন্নয়ন দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক পরীক্ষার্থী পড়বে চরম অস্থিরতায়। এখন পরীক্ষা দেয়ার চাইতে অনেক পরীক্ষার্থীর টেনশন হয়ে দাঁড়িয়েছে রেজাল্ট পরবর্তী পরিবারকে কি বলবে, কিভাবে তাদের ফলাফল মা-বাবাকে জানাবে?

অনেক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছরের মত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়েছে, তখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা উদয় হয়নি, আর দেড় থেকে দু'মাস পর পরীক্ষা দিলে বিশ্ববিদ্যালয়টির এমন কি জট হয়ে যেত যে এখন শেষ সময়ে এসে জট কমানোর অপচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের মারতে বসেছে। তারা আরও দাবি করছে যে অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষারও যে সময়সূচি দেয়া হয়েছে তাতেও দু'টি পরীক্ষার মধ্যে ব্যবধান অনেক কম যা কোর্স রিভিশনের জন্য যথেষ্ট নয়।

আবার অনেক পরীক্ষার্থী বলেছে ‘পরীক্ষার ফল খারাপ হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া ছাড়া তাদের কোন উপায় থাকবে না। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে কম পয়েন্টের ফল নিয়ে বের হয়ে চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে ঘুরে জুতা ক্ষয়ই হবে।

এমতাবস্থায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশেষ অনুরোধ জানান তারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। তারা রুটিন তৈরিতে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে এমন সমন্বয়হীনতার কারণে শাস্তির দাবিও করেছেন।

একজন লিখেছেন, সবচেয়ে ভালো হয় 1st year থেকে Masters একবারে পরীক্ষা নিয়ে নিলে বার বার ঝামেলা করতে হয় না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের।

আরেকজন লিখেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন কো- অর্ডিনেটর খেয়াল করেনি যে থার্ড ইয়ারের ELT এবং ফোর্থ ইয়ারের Twentieth Century Novel একই দিনে পরে গেছে! একটু পার্থক্য অবশ্য আছে: আমাদের ৯. ৩০ আর তাদের ৯টায়। তাহলে সিনিয়রররা কি Improvement দিবেনা???? .......ঝাঁজটা মনে হয় একটু বেশিই ছিল!!!

আরেকজনের ভাষ্য, সবাই প্রতিবাদ করুন যেন অন্তত ১ মাস পিছিয়ে দেয়া হয় ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট থেকে ইমেলই নম্বর নিয়ে ইমেইল করুন। এ ভয়ানক অবস্থা। সব কিছুর একটা সীমা থাকে। পরিবর্তন হোক ১ম বর্ষ থেকে। আমাদের ১ মাসের জন্যে কিছু হবে না।

একজন লিখেছেন, NU যত বাঁশ দিতেছে সব 2009-10 সেশনের ছাত্র-ছাত্রী দেরকে দিচ্ছে। প্রশ্নর মান পরিবর্তন, সিলেবাস পরিবর্তন, ইর্নকোস নাম্বার দু বছর না দেওয়া, আর এখন ফাইনাল ইয়ারের ৬ মাসেই পরীক্ষা হয়ে যাবে। ভালো ভালোনা!যাই হোক আমার দাবি পরীক্ষাটা অতন্ত ১ টা মাস পিছানো হোক, আগামী জুলাই মাসে শুরু করুক।

একজন নিজেই ভুক্তভোগী উল্লেখ করে লিখেছে, তোমরা কি দেখেছো ফরম পূরনের ১০দিনের মাথায় পরীক্ষার রুটিন দিতে তাও আবার ২২দিন আগে দিল রুটিন বই এখনও আসেনি লাইব্রেরি তে টেষ্ট পেপার তো দূরের কথা। কোন শিক্ষক পর্যন্ত দেখেনি এমন অবস্থা। এটা কি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থা। নাকি প্রতিষ্ঠান ভাগ হওয়ার কথা শুনে এমন সিদ্ধান্ত নিলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেখাচ্ছে তারা কত ভাল তাদের নিয়ন্ত্রনেই থাকুক সব কলেজ। তবে সেটাই যদি হয় তবে আমাদের উপর কেন অত্যাচার আমাদের অনেক শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়ন পরীক্ষা রয়েছে। তারা কিভাবে দুটো পরীক্ষা দেবে। ভাবা উচিৎ সবার। । । । । । আমার নিজেরই একি দিনে দুইটা পরীক্ষা!!!! আমি কি করব??? আমার মতো অনেকেরই আছে!!!!!

বিষয়টি নিয়ে বাংলানিউজের পক্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক(ভারপ্রাপ্ত) বদরুজ্জামান মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ২টি বর্ষের একটি পরীক্ষা একইদিনে ছিল। সেটা আমরা পরিবর্তন করে দিয়েছি। এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারছি না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৫
এনএস

** খুলনায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ-মানববন্ধন
** পরীক্ষার সূচি পরিবর্তনে বিএম কলেজে বিক্ষোভ
** ‘একটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষাবর্ষ, কিছু স্বপ্নের অপমৃত্যু’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।