ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

লোহা পিটিয়ে জিপিএ ৫ পেলো উজ্জ্বল

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৭ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৫
লোহা পিটিয়ে জিপিএ ৫ পেলো উজ্জ্বল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জয়পুরহাট: প্রায় ১০ বছর আগে বাবা বিভূতি কর্মকার সংসারের মায়া ছেড়ে পরপারে চলে যান। বিধবা মা রুপালী কর্মকার এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসার চালানোর চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েন।

এ অবস্থাতেই মেয়েকে বিয়ে দেন জয়পুরহাট সদরের ভাদশা ইউনিয়নের বানারসি কর্মকার পাড়ায়।

বাবা মারা যাওয়ার ঠিক তিন বছর পর মাও মারা যায় উজ্জ্বলের। তখন সে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। কোন কূলকিনারা না পেয়ে সে চলে আসে জয়পুরহাটে দিদির বাড়িতে। আর সেখানেই জামাই বাবু (ভগ্নিপতি) লিটন চন্দ্র কর্মকারের কাজে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতিতে ঠাঁই মেলে তার। শুরু হয় উজ্জ্বল কর্মকারের নতুন জীবন।

লোহা পেটানো কাজের পাশাপাশি সে ভাদশা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। আর এভাবেই দিনে জামাই বাবুকে সাহায্য, রাতে ঘুম জেগে পড়াশোনা করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ অর্জন করেছে উজ্জ্বল।

সরেজমিন ভাদশা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মেধাবী ছাত্র উজ্জ্বল কর্মকার তখনও জামাই বাবুর সঙ্গে লোহা পেটানোর কাজ করছে। বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার আমষট্টিতে জন্ম নেওয়া উজ্জ্বল বাংলানিউজকে জানায়, মা-বাবা হারানোর শোককে ‘শক্তিতে’ পরিণত করে শত বাধা উপেক্ষা করেও লেখাপড়াটা ঠিক রেখেছে। সে জানায়, শুধুমাত্র বাংলায় ‘এ প্লাস’ না থাকায় গোল্ডেন প্লাস থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে তাকে।

এ ব্যাপারে উজ্জ্বলের জামাই বাবু লিটন চন্দ্র কর্মকার বাংলানিউজকে বলেন, লোহা পেটানোর টুংটাং শব্দকে পুঁজি করেই উজ্জ্বল কর্মকার ‘উজ্জ্বল’ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে। তবে দরিদ্রতা তাকে কতদূর পৌঁছাতে দেবে সে কথা আমিও বলতে পারছি না।

এদিকে, ভাদশা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার চৌধুরী বলেন, নিজের ইচ্ছা শক্তি যদি ঠিক থাকে, তবে যে কোন অসাধ্য কর্ম সাধন করা সম্ভব। উজ্জ্বল সারাদিন লোহা পেটানোর কাজ করেও শুধুমাত্র ইচ্ছা শক্তির কারণেই সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।

সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা পেলে পড়ালেখা শেষ করে একদিন ইঞ্জিনিয়ার (প্রকৌশলী) হওয়ার সাধ মেটাবে সে-এমনটাই স্বপ্ন দেখে নিজ আলোয় আলোকিত পরিশ্রমী এই মেধাবী ছাত্র।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।