ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

স্বপ্ন পূরণ হবে তো?

সুমন রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৫ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৫
স্বপ্ন পূরণ হবে তো?

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের নাগরপুরে আট অদম্য মেধাবী দারিদ্র্যকে জয় করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে। অভাব অনটনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওরা আধার ঘরে আলো জ্বালিয়েছে।

এরা কেও দিন মজুর, ফুটপাতের চা দোকানি, কারখানা শ্রমিকের সন্তান আবার কেউবা পিতৃহীন।

কষ্টের অন্ত নেই। অভাব ওদের নিত্য সঙ্গী। দুবেলা দুই মুঠো ভাল খাবার জোটে না তাদের ভাগ্যে। চাহিদা মাফিক জোগাড় হয়নি পোষাক। তবুও দমে যায়নি। স্বপ্ন পূরণের সংগ্রামে তারা হার মানেনি দারিদ্র্যের কাছে। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে হাসি ফুটিয়েছে অভাবী মা-বাবার মুখে।

শিক্ষা জীবনের প্রথম এ সাফল্যে তাদের দু’চোখে এখন এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে অভিভাবকের মনে শঙ্কার পাহাড়। অর্থাভাবে ভাল কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই তাদের। অনেকের ডাক্তার, প্রকৌশলী ও শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের মাঝে দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছে দারিদ্র্য। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেই ওদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব।
 
জনি মিয়া: জনি মিয়া এবার এসএসসি পরীক্ষায় নাগরপুর নয়ানখান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। জনির ছোট বয়সে মারা যান বাবা পান্নু মিয়া। এর পর থেকে বহু কষ্টে মা হাসনা বেগম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন।

৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পিতৃহীন মেধাবী জনি নজরে পড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের। বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পায় সে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে। অভাবের মাঝে চলে তার শিক্ষা জীবন। টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়া হয়নি। জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে জনির মা হাসনা বেগম।

তামান্না খাতুন: বাবা ইয়াকুব আলী কৃষক। মা নার্গিস আক্তার গৃহিনী। নাগরপুর উপজেলার চরাঞ্চল ভাড়রা ইউনিয়নের নদীভাঙন কবলিত এলাকা মারমায় তাদের অভাবের সংসার। জমিজমা সব যমুনায় চলে গেছে। অন্যের জমিতে কাজ করে সামান্য আয়ে কোন রকমে চলে তাদের সংসার।

মেয়ের জন্য গৃহ শিক্ষক রাখতে পরেন নি। তাই খাস শাহজানী এমএ করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও পরিবারের আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত মেয়ে তামান্নার এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পূরণ হবে তো?

রাসেল মিয়া: নাগরপুর উপজেলার নয়ানখান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে রাসেল। বাবা সাহাদত হোসেন ও মা হালিমা বেগমের অভাবের সংসারে অতিকষ্টে পড়াশোনা করছেন। একখণ্ড বসত ভিটা ছাড়া আর কোন জমি নাই।

মেধাবী রাসেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন মা হালিমা বেগম। শেষ পর্যন্ত মেধাবী ছেলে রাসেল উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারবে তো? এই আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছে অসহায় বাবা-মাকে।
 
সাদিয়া রহমান (মৃদু): টাঙ্গাইলের নাগরপুর নয়ান খান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে সাদিয়া আক্তার মৃদু। সে উপজেলার বেকড়া ইউনিয়নের সাতগাছা গ্রামের শ্রমিক নবনুর রহমানের মেয়ে। মা মমতাজ বেগম গৃহিনী। কারখানায় সামান্য বেতনের শ্রমিক নবনুর সংসার চালিয়ে মেয়ে কে পড়াশোনা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

মা-বাবার অনেক আশা মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। তার মেয়ে মৃদুর স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের দারিদ্র্যতা।

সুবর্ণা আক্তার: সুবর্ণা আক্তার এবারের এসএসসি পরীক্ষায় খাস শাহজানী এমএ করিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। মেয়ের এ সাফল্যে আনন্দের পাশাপাশি দুশ্চিন্তারও অন্ত নেই অবিভাবকের। অভাব অনটনের সংসার তার ওপর সর্বনাশা যমুনা নদী গিলে খেয়েছে সবটুকু জমি। নদীভাঙন এলাকা আগদিঘুলিয়া গ্রামের শেষ অবলম্বন বসত ভিটা আকড়ে ধরে জীবন সংসারে যুদ্ধ করে চলছেন বাবা গোলাম হোসেন ও গৃহিনী মা লাভলী আক্তার।

অন্যের জমি চাষ করে চলে তাদের সংসার। অভাব অনটনের মধ্যেও হাল ছাড়েননি। মেয়ের কৃতিত্বে আনন্দে আত্মহারা বাবা মা। শুধু টাকার অভাবে মেধাবী মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
 
সুরমা আক্তার: নাগরপুর নয়ানখান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সুরমা আক্তার। বাবা মেঘনা গ্রামের হত দরিদ্র আনোয়ার হোসেন, মা জনতা বেগম গৃহিনী। বসত ভিটায় থাকার মত অবলম্বন একটি ছাপড়া ঘর। মা-বাবার সঙ্গে ছাপড়া ঘরটিতে বসবাস করতে হচ্ছে মেধাবী সুরমা আক্তারকে।

দু’বেলা ভাল মতো খাবার জোটেনা, ইচ্ছে থাকা সত্বেও ভালো পোষাক জোগাড় করতে পারেন না তার অভিভাবক। গ্রামের রাস্তার পাশে পান-বিড়ির দোকান করে সংসার চালানোই এখন একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম বাবা আনোয়ার হোসেনের।

এত কষ্টের পরেও থেমে থাকেনি সুরমার পড়া লেখা। পরিবারের আশা সুরমা একদিন অনেক বড় হয়ে তাদের মুখ উজ্জল করবে। সুরমা কি সত্যিই পারবে তার স্বপ্ন পূরণ করতে নাকি মাঝ পথেই থেমে যাবে?

তারিন আক্তার: ঘুনিপাড়া আব্দুর রশিদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে তারিন আক্তার। উপজেলার কাচপাই গ্রামের কৃষক হায়দার আলীর মেয়ে । মা ছালেহা বেগম গৃহিনী। বড় বোন শারমিন আক্তার ২০১২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে। বড় বোনের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ জোগান দিতে বাবা-মাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কিভাবে তারিনের উচ্চ শিক্ষার খরচ জোগাবে অসহায় বাবা মা। শেষ পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে কি না এই ভাবনায় রয়েছে মেধাবী তারিন আক্তার।  

মিম: নাগরপুর নয়ান খান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে মিম। আত্মপ্রত্যয়ী মেধাবী মিম দারিদ্র্যকে জয় করে জীবনের প্রথম সফল্য লাভ করলেও অর্থের অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন দিন মজুর বাবা মিজানুর রহমান ও গৃহিনী মা হালিমা বেগম।

সংসারের  টানা পোড়েনের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট করে মেয়ে মিমকে লেখা পড়ার খরচ জুগিয়েছেন তারা। ভাল কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ কিভাবে জোগান দিবেন -এ ভাবনা এখন তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৬ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৫     
এমজেড/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।