ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

এনবিআরে বাধাগ্রস্ত বেসরকারি উচ্চশিক্ষা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৫
এনবিআরে বাধাগ্রস্ত বেসরকারি উচ্চশিক্ষা

ঢাকা: বেসরকারি খাতে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সুষ্ঠু বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে এনবিআর। উচ্চ হারে করারোপ, বিভিন্ন অযাচিত সিদ্ধান্ত এবং উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও অহেতুক হয়রানির মাধ্যমে এ খাতের মানসম্মত উন্নয়ন ব্যহত করছে সংস্থাটি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক উদ্যোক্তা এ অভিযোগ করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক মুনাফার ওপর এনবিআর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপ করছে। অথচ ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘বোর্ড অব ট্রাস্টিজ’ দিয়ে পরিচালিত। তারপরও আইনের তোয়াক্কা না করে বার বার আয়কর নোটিশ পাঠিয়ে অযথা হয়রানি করছে এনবিআর।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, টিউশন ফি থেকে অর্জিত আয়ের ওপর এনবিআর ১৫ শতাংশ আয়কর ধার্য করায় আইনের বিধিমতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ নিতে পারছে না। অনেকে আবার ক্যাম্পাস নির্মাণের মতো ব্যয়বহুল কাজে হাত দিলেও অর্থসংকটে পড়ছে। সহজ শর্তে ঋণের সংস্থানও হচ্ছে না তাদের।  

এনবিআর এর এই অহেতুক হয়রানি সম্পর্কে তারা আরও বলেন, অতীতে শিক্ষার্থীর টিউশন ফি’র ওপর ৪.৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এনবিআর’র এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৪৪(৭) ধারা মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত মুনাফা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতের বাইরে অন্য কোথাও ব্যয় বা বিনিয়োগের সুযোগ নেই। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই আইনের দৃষ্টিতে ‘দাতব্য ট্রাস্ট’হওয়ায় এর মুনাফার ওপর করারোপ সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন অনেকে। আইনের ৪১ ধারায় অর্থায়নের উৎস হিসেবে ‘শিক্ষার্থী ফি’ উল্লেখ করা আছে যা আইনানুসারে করমুক্ত হওয়া উচিত।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এনবিআর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সরকারের আয়ের উৎস বাড়ানোর জন্য ২০১০ সাল থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মুনাফার ওপর করারোপের হার প্রায় ৪০ শতাংশ ছিল। তবে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা মাথায় রেখে তা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ’ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই অন্যায় করারোপ নিয়ে একাধিকবার এনবিআর এবং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেও কোনও লাভ হয়নি। সরকারি এসব সংস্থার প্রধানরা মনে করেন- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চ হারে ফি নিচ্ছে তাই করারোপ যথাযথ।

বিষয়টির কোনও সমাধান না হওয়ায় প্রায় ৩৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ পেলেও এনবিআর বার বার বকেয়া কর পরিশোধের চিঠি দিয়ে হয়রানি করছে।

এদিকে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি অবহিত হলেও এর সমাধানে কোনও কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বার বার চিঠি দিয়েও কোনও ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়নি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবশ্য মনে করেন, সরকার পর্যাপ্ত মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারায় তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হচ্ছেন। এতে খরচ বেশি হলেও সঠিক সময়ে শিক্ষাজীবন শেষ করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বাড়তি করারোপের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাব্যয় আরও বেড়ে যাচ্ছে যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।