ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

বাংলানিউজকে ঢাবি উপাচার্য

শিক্ষার্থীরাই ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় শক্তি

মাহমুদ মেনন ও সাখাওয়াত আমিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
শিক্ষার্থীরাই ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় শক্তি ছবি: জি এম মুজিবুর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: নিজের জন্য নয়, ক্যাম্পাসের ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিয়েই বেশি ভাবছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক। আর সে জন্য ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন, অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগকেও।

একই সঙ্গে তার নিজের নিরাপত্তার জন্য যে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিলো তাদের ফেরত পাঠিয়েছেন ঢাবি উপাচার্য। তার মতে, পুলিশ প্রহরা বাড়লে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ‍আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে।
 
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের অতিরিক্ত উপস্থিতি কখনোই কাম্য নয়, বলেন তিনি।

এসব হুমকি-ধমকিতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি মোটেই ভীত নন বলে জানিয়ে অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমার নামে এ ধরনের চিঠি আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা গারবেজ বক্সে ফেলে দিতে বলি।

তবে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে ক্যাম্পাসে আগের চেয়ে আরও বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেই জানালেন ঢাবি উপাচার্য।

‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-১৩’ নামের একটি জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের বারবার হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আর প্রতিবারেই থাকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপাচার্যের নাম।
 
শুক্রবার রাতে নিজ বাসভবনে বাংলানিউজের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় এসব বিষয় নিয়েই কথা বলেন অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বলেন, আলোর সঙ্গে অন্ধকারের এই বিদ্বেষ সভ্যতার শুরু থেকেই রয়েছে। ওরা অন্ধকারের জগত বাস করছে আর সে কারণে যেখানে আলো সেখানে ওরা হানা দেবে সেটাই স্বাভাবিক।

এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে দুইবারসহ এ নিয়ে তিন দফা ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-১৩’ থেকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নামে। সর্বশেষ গত ১৬ জুন তাকে উদ্দেশ্য করে পাঠানো এক চিঠিতে তিনিসহ ২৫জন বিশিষ্ট নাগরিককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে গত ২১ মে ১০ বিশিষ্ট নাগরিককে হত্যার হুমকি দেয় একই নামের সংগঠন। তাতেও ছিলো অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের নাম।

এই হুমকির কতটা ভিত্তি রয়েছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি বলেন, চিঠি আসে ডাকযোগে, তাতে হত্যার হুমকি থাকে। ফলে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই কারা এই হুমকি দিচ্ছে। কারণ এই হুমকির কথা প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার করে না।  
 
তবে বিষয়টিকে গুরুত্বহীনভাবেও দেখতে চান না তিনি। আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এই ধরনের সংগঠনের সঙ্গে সংগঠিত কোন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগাযোগ থাকে। এই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-১৩’র সঙ্গে তেমন কোনও বড় আন্তর্জাতিক সংগঠন জড়িত কিনা তা বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্র এবং তার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। আর এই সংগঠন যদি অস্তিত্বহীন, আর চিঠি হয় ভিত্তিহীন সেট‍াও নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের।

একটি বিশেষ মহল হুমকি-ধমকি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এ সংগঠনের নাম ব্যবহার করতে পারে এমনটাও সন্দেহ অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের।

একই সঙ্গে তিনি এও বলেন, অনলাইন-ফেসবুকে আগে এ ধরনের হুমকি দিয়ে অভিজিৎ রায়সহ কয়েকজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ রাষ্ট্রের নেই।

গোয়েন্দাবাহিনীর সদস্যরা তার পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান তিনি।

‘আমরা প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনার মানুষ। প্রগতিশীলতার পক্ষে কথা বলি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলি। এদেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটা শক্তি আছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। তাদের একটা নেটওয়ার্ক বাংলাদেশে থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এরকমও হতে পারে যে আমাদের কর্মকাণ্ডে একটি অপশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা হতাশ হচ্ছে। তাই বিভিন্ন হুমকি-ধমকির মাধ্যমে আমাদের তটস্থ রাখার অপচেষ্টা করছে,’ হুমকির কারণ কি হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাব এভাবেই দিলেন ‍অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।
 
দেশে যদি কোন আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক থেকেই থাকে সেক্ষেত্রে আরেফিন সিদ্দিকের পরামর্শ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি নির্মুল গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলা।

তিনি বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় যেমন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে তেমনি বিশ্বব্যাপী জঙ্গি নির্মূলে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসের নিরাপত্ত‍া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদারে প্রতিনিয়ত আলোচনা চলছে। ক্যাম্পাসে একটি সুরক্ষিত নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখার জন্য তারা আশ্বাস দিয়েছেন।

এরই মধ্যে গুরুত্বপুর্ণ দফতরসহ প্রতিটি হলেই ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া  ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্টেকে সিসিটিভির আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ড নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে, জানান তিনি।

ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদেরকেও সতর্ক ও সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, হরতাল অবরোধের সময় শিক্ষার্থীরা অনেক নাশকতাকারীকে ধরতে সহায়তা করেছে। আশাকরি ভবিষ্যতেও করবে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এর সবচেয়ে বড় শক্তি, বলেন আরেফিন সিদ্দিক।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, জুন ২১,২০১৫
এসএ/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।