ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

বাংলানিউজকে ঢাবি উপাচার্য

শিক্ষার র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বমানের ঢাবি, পিছিয়ে বাজেটে

মাহমুদ মেনন ও সাখাওয়াত আমিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৫
শিক্ষার র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বমানের ঢাবি, পিছিয়ে বাজেটে ছবি: জি এম মুজিবুর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গোটা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বাসী নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‍উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক। তার মতে, যেসব সূচকের ভিত্তিতে র‌্যাংকিং প্রকাশিত হয় তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।



বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাজেট দিয়ে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ৩শ’-সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা  বার্ষিক বাজেটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা চলে না। আরেফিন সিদ্দিক বলেন, তুলনা করতে হবে শিক্ষায়, যোগ্যতায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যত কত কম খরচে যোগ্য গ্রাজুয়েটে তৈরি করছে তার সঙ্গে তুলনামূলক বিচার করা হলে হাভার্ড, ক্যামব্রিজই পিছিয়ে থাকবে, বলেন তিনি।

বাংলানিউজের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক।

হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, টোকিও এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষার্থীকে বসিয়ে একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হোক। তারপরে মূল্যায়ন করা হোক কার কোয়ালিটি কেমন, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তিনি।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এত কম বাজেট এবং সুযোগ সুবিধার অভাব সত্ত্বেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা অনেক শিক্ষার্থী হার্ভার্ড-অক্সফোর্ড বা ক্যামব্রিজে গিয়ে পড়ছেন। তারা যখন একই লেভেলে পড়াশুনা করেন তখনতো তাদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য দেখা যায় না। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা অপেক্ষাকৃত ভালো করছেন। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরাই হচ্ছেন বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

অক্সফোর্ড, হার্ভাডে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভালো ফল করে ফিরছে। বিভিন্ন পুরষ্কার জিতে আসছে। সুতরাং পারছে না যে তা তো নয়, বলেন আরেফিন সিদ্দিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে যোগ্য শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত এবং এখনকার শিক্ষার্থীরাও অনেক বেশি মেধাবী ও সৃজনশীল, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, অতীতে কোন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে এত সংখ্যক পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক ছিলনা যত সংখ্যক রয়েছে এখন। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে শিক্ষকদের বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধ নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষককে সেজন্য পুরষ্কৃতও করা হচ্ছে।

অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক ২০০৯ সালে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ছয় বছরে একদিনও অঘোষিত বন্ধ থাকেনি বিশ্ববিদ্যালয়। সেমিস্টার পদ্ধতিতে সময়মত ক্লাস ও পরীক্ষা হওয়ায় সেশনজট নেমে এসেছে শুণ্যের কোটায়। তাছাড়া সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষাও এগিয়ে আনা হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা এখন ঠিক সময়ে তাদের শিক্ষাজীবন শুরু ও শেষ করতে পারছে। যাকে একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখতে চান তিনি।

একাডেমিক ক্যালেন্ডার ঠিক রাখতে, আর সময়মত পরীক্ষা নেওয়ার তাড়াহুড়োয় শিক্ষার মানের সঙ্গে কোন আপোষ করা হচ্ছে কিনা? বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, সেমিস্টার পদ্ধতিতে ক্লাসগুলো সময়মত শেষ হয় বলেই পরীক্ষাও সময়মত অনুষ্ঠিত হয়। তাই সিলেবাসে কোন ঘাটতি থাকার সুযোগ নেই।

এখনকার শিক্ষকরা লেখাপড়ার বিষয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস, তারা লেগে থেকে শিক্ষার্থীদের শেখানোর চেষ্টা করছেন, শিক্ষার্থীরাও মেধাবী ফলে মান বজায় রেখেই এগিয়ে চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মত ঢাবি উপাচার্যের।

বিশ্বের সঙ্গে তুলনামূলক বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতটা এগিয়ে সে প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রযুক্তির আবিষ্কার ও ব্যবহারে উন্নত বিশ্বগুলোর সঙ্গে সব সময় সমান তালে এগুনো সম্ভব হয় না। সে দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকতেই হয়। এ জন্য যে বড় বাজেটের প্রয়োজন তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। সে কারণেই এই পিছিয়ে থাকা।  

তিনি বলেন, বাজেট স্বল্পতার কারণে আমরা ঠিকমত শিক্ষা উপকরণ দিতে পারছি না। লাইব্রেরিতে পড়াশুনার ভালো ব্যবস্থা করতে পারছি না। ঠিকমত আবাসন সুবিধা দিতে পারছি না। দিতে পারছি না শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণার  জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। এসব সুচক দিয়ে যখন তুলনা করা হয় তখন বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়ি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কম সেটাও একটা কারণ, বলেন আরেফিন সিদ্দিক।

বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষকদের যে দাবি তা পূরণ করা জরুরি বলেই মনে করেন তিনি।   

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৫
এমএমকে

** শিক্ষার্থীরাই ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় শক্তি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।