রাবি(রাজশাহী): রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটিতে আবাসিক হল খোলা রাখার দাবিতে প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে রাবি ছাত্রলীগ। ছুটিতে হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
হল খোলা রাখার দাবিতে রোববার(২৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন ভবনের গেট বন্ধ করে সেখানে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হলের বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে স্লোগান দেন তারা।
প্রশাসন ভবনের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকা পড়েছেন। গেট দিয়ে কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত(বিকেল সাড়ে ৩টা) প্রশাসন ভবনের সামনে ছাত্রলীগের অবস্থান চলছে।
এছাড়া রোববার দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে ক্যাম্পাসে বাইরে থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বাস ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে আটকে আছে।
প্রশাসন ভবনের সমানে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সাইদুল ইসলাম রুবেলম, রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহমেদ কৌশিক, রাবি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটিতেও হল খোলা রাখা হয়। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অল্প দিনের ছুটিতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হয়। অনেকের পরীক্ষা ও অন্যান্য কাজ থাকায় তাদের রাজশাহীতেই থাকতে হয়। ফলে তাদের বিপাকে পড়তে হয়। এতে তাদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে।
তারা বলেন, আগামী ৮ জানুয়ারি বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিসিএস এর মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার কথা বিবেচনা না করেও হল বন্ধের এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরা মানে না। হল খোলা রাখার দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা। সমাবেশ থেকে রোববার সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করার ঘোষাণা দেওয়া হয়।
সমাবেশে রাবি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমা- ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে যোগ দেন।
শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বলেন, আর কয়েকদিন পর বিসিএস পরীক্ষা। এখন হল বন্ধ হলে বাড়ি যেতে আর আসতেই সময় চলে যাবে। যা প্রস্তুতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুদীপ্তা সরকার বলেন, ‘কয়েকদিনের ছুটিতে হল বন্ধ করা ঠিক না। ছুটি শেষে আমার ফাইনাল পরীক্ষা আছে। তাই এসময় বাড়ি গেলে পড়াশোনায় সমস্যা হবে। ’
শীতকালীন অবকাশের জন্য আগামী ১ থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ছুটিতে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকবে।
এদিকে, ১ জানুয়ারি ছুটি শুরু হলেও ৩১ জানুয়ারি হল বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন বিভিন্ন বিভাগে ক্লাশ-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর শিউলি শামিম শান্তা বলেন, ‘ওইদিন দুপুর ১২টায় হল বন্ধ হবে। তখন ক্লাস-পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। একদিন একটু সমস্যা হতেই পারে। ’
এদিকে, হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টুকিটাকি চত্বরে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ থেকে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানানো হয়।
রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ছুটির সময় আবাসকি হলগুলো বন্ধ রাখা হয়। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এবার হল বন্ধের সময় কমানো হয়েছে। তারপরও যে আন্দোলন চলছে তা অযৌক্তিক। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
পিসি/