ভোলা: নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সুনামের সঙ্গে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে ভোলা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবদুর রব স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শিক্ষকদের দায়িত্বশীল পাঠদানের মাধ্যমেই প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটি ভালো ফলাফল অর্জন করে সবমহলে প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটিকে আরো বেশি গতিশীল ও শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রথমবারের মত চালু করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এতে একদিকে যেমন শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদানে উৎসাহিত হবেন অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও পড়াশুনায় মনযোগী হবে।
সিসি ক্যামেরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একাডেমিক নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধসহ নানা অনিয়ম থেকে কোমলমতী শিক্ষার্থীরা রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান।
তিনি জানান, দ্বীপজেলা ভোলায় প্রথমবারের মত ডিজিটাল এ প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ আরো উন্নত হবে। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তাবায়নে একধাপ এগিয়ে যাবে।
আবদুর রব স্কুল অ্যান্ড কলেজ সূত্র জানায়, শহরের পৌর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যোগীরঘোলে ১৯২৫ সালে জৈনপুর হযরত এর নামেই আবদুর রব স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮০সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। ২০১৪ সালের দিকে স্কুলের সঙ্গে কলেজ শাখা চালু হয়। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সুযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে।
২০১০ সালের দিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সাফিয়া খাতুন। তিনি দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে শিক্ষা ও খেলাধূলায় এবং নৈতিকতায় বেশ সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে স্কুলটি।
বিগত দুই বছরে জেএসসি ও এসএসসিতে ভালো ফলাফল অর্জন করেছে স্কুলটি। এর মধ্যে ২০১৪ সালে জেএসসিতে ২১৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ২১৫ জন পাস করেছে। পাসের হার ছিলো শতকরা ৯৯ দশমিক ৫৪। যার মধ্যে জিপিএ-৫ ছিলো ৩৭টি। ২০১৫ সালে জেএসসিতে ২৫৯ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২৫৮ জন পাস করেছে। তবে একজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় শতভাগ পাস অর্জিত হয়নি। ওই বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫০ জন। পাসের হার ছিলো ৯৯ দশমিক ৬১।
এসএসসিতে ২০১৪ সালে ১৭২ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ১৬২ জন। পাসের হার ছিলো ৯৪ দশমিক ১৯। এবং ২০১৫ সালে ১৮৪ জনের মধ্যে পাস করেছে ১৭২ জন। পাসের হার ছিলো শতকরা ৯৩ দশমিক ৪৮।
শুধু পড়াশুনা নয়, এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছে খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চাতেও। চলতি শীতকালীন খেলাধূলায় ক্রিকেট, ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
আবদুর রব স্কুল অ্যান্ড কলেজ সূত্র আরো জানিয়েছে, ১লা জানুয়ারি বই উৎসবের দিন সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতেই আটটি ক্লাস রুমে সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত হয়। নতুন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধান ক্লাস রুমসহ সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন। এতে প্রতিষ্ঠানে নতুন এক পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
খুব শিগ্রই প্রতিষ্ঠানের গর্ভনর বডির সভাপতি ও ভোলা পৌর মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিসি ক্যামেরা প্রযুক্তি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। ওই সময় প্রতিটি শ্রেণিকক্ষেই সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত হবে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, বিগত দিনে এ প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করেই অনেক শিক্ষার্থী এখন সুনামের সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী হিসেবে অধিষ্ঠিত। এছাড়াও সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অনেক শিক্ষার্থী দেশ ও দেশের বাইরে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে এ প্রতিষ্ঠানের গুরুপ্ত অপরিসীম। ভবিষ্যতেও এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকার মানুষ।
প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির জিসান ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিমিন জানায়, সিসি ক্যামেরা চালু হওয়াতে আমাদের মাঝে পরিবর্তন এসেছে। কঠোর নিরাপত্তা থাকায় আমরা মনযোগ দিয়ে পাঠগ্রহণ করছি।
প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক মন্তব্য করে বলেন, শহরের দু’টি সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই সিফটে ভর্তি যুদ্ধের পর অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে থাকে। অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ওই সকল শিক্ষার্থীদের আমরা ভর্তি করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পাঠদানের মাধ্যমে মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। এটা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ।
অন্যদিকে অভিভাবকরা জানান, দুই সরকারি স্কুলের পরেই একমাত্র বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবদুর রব স্কুল অ্যান্ড কলেজ সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। যে কারণে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি ওই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই।
এ ব্যাপারে আবদুর রব স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাফিয়া খাতুন বলেন, আমি দায়িত্বভাব গ্রহণ করার পর শিক্ষার পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। কোমলমতী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় আরো বেশি মনযোগী করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিসি ক্যামেরা প্রযুক্তি অন্যতম। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র, ইউনিফর্ম ও মেয়েদের পৃথক নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংযুক্ত করা হয়েছে ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব ও ডিজিটাল ক্লাসরুম।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ খুব দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে এসে মনযোগী হচ্ছেন। ভবিষ্যতেও প্রতিষ্ঠানের সাফল্যেও ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত রাখান জন্য সব্বোর্চ চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
আরএ