ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

হার মানেনি লালমনিরহাটের আরিফা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৬
হার মানেনি লালমনিরহাটের আরিফা ছবি: বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

লালমনিরহাট: জন্ম থেকে দু’টি হাতই অচল আরিফার। কিন্তু তাতেও থেমে নেই আরিফা।

পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে। পায়ের লেখা হলেও তার ঝকঝকে ও পরিচ্ছন্ন লেখা যে কারোরই দৃষ্টি কাড়বে।

প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী আরিফা লালমনিরহাট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১১৬ নম্বর কক্ষে টেবিলের উপর বসেই পরীক্ষা দিচ্ছে।

আরিফা লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফুলগাছ উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক শাখার ছাত্রী। সে সদর উপজেলার খোড়ারপুল শাহীটারী গ্রামের দিনমজুর আব্দুল আলীর ছোট মেয়ে।

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া মাত্রই একাগ্র চিত্তে পা দিয়ে খাতায় উত্তর লিখে যায় আরিফা খাতুন। এ পরীক্ষার্থীর জন্য দেওয়া হয়েছে ২০ মিনিট অতিরিক্ত সময়।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ছোট আরিফা খাতুন পড়াশুনায় বেশ মনোযোগী। তার অপর দুই ভাই ও দুই বোন স্বাভাবিক হলেও আরিফা জন্মের পরই প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। বাবা আব্দুল আলী দিনমজুর আর মা মমতাজ বেগম গৃহিনী।  

লেখাপড়ার জন্য প্রতিবন্ধী হওয়াটা তার জন্য যতটা প্রতিবন্ধকতা তার চেয়ে বড় বাধা দারিদ্রতা। দারিদ্রতার যাতাকলে পিষ্ট এ পরিবারের প্রতিবন্ধী সন্তান হিসেবে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

স্থানীয় রায়পাড়া ব্র্যাক প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে আরিফা ভর্তি হয় ফুলগাছ উচ্চ বিদ্যালয়ে। মেধা তালিকায় পঞ্চমে থাকা আরিফা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে এমনটিই বিশ্বাস শিক্ষক, সহপাঠী, প্রতিবেশী ও বাবা-মায়ের।

আরিফার মা মমতাজ বেগম জানান, আরিফার দু’টি হাতই সম্পূর্ণ অচল হওয়ায় পা দিয়ে তাকে করতে হয় সব ধরনের কাজ। লেখা, আঁকা, পানি পান করা, মাথায় চিরুনি দেওয়া সবই পা দিয়ে করে সে। তবে খাওয়া, গোসল আর পোশাক পড়া এগুলো মায়ের সাহায্যে করতে হয়।

আরিফার শিক্ষক ফুলগাছ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী বাংলানিউজকে জানান, শারিরীক প্রতিবন্ধী আরিফা খাতুন অদম্য ইচ্ছা থেকে পড়াশুনা করছে আর উচ্চ শিক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এর জন্য দারিদ্রতা অনেকটাই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। দারিদ্রতা আর প্রতিবন্ধীতাকে জয় করে আরিফা একদিন লালিত স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিবে বলে তিনি আশাবাদী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।